বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ মালিকই এখন ব্যক্তিগত তহবিল দিয়ে কোনোমতে চালু রেখেছেন। যারা তা-ও পারছেন না তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ বিক্রি করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠান।
রাজধানীতে কী পরিমাণ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে তার সঠিক হিসাব নেই। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১০ হাজার রেস্তোরাঁ আছে। সারাদেশে আছে ৬০ হাজারের ওপরে। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বলছে, করোনার কারণে অন্তত ২০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হওয়ার পথে।
রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার ছাড়া ক্রেতাদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। করোনার কারণে বলা যায় ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ভাড়া, বেতনসহ খরচের একটা বড় অংশই আসছে মালিকের জমানো টাকা থেকে।
ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের জেনিয়াল ব্যুফের স্বত্বাধিকার মো. মাহবুব জামান জানান, ‘আমাদের এখানে ১১০ জনের বসার ব্যবস্থা ছিল। করোনার কারণে তা কমিয়ে ৬০ করা হয়েছে। তার ওপর নেই বিক্রিবাট্টা। শুধু শুক্রবার একটু অতিথি আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেস্তোরাঁ ব্যবসা খারাপ হওয়ার সুযোগে এখন ক্রেতারা ফিক্সড দামের ওপর ডিসকাউন্ট চেয়ে বসে। আমরা ৫ শতাংশ দিলে ২০ শতাংশ চায়। অন্যান্য জায়গায় ভাড়া কমানোর সুযোগ থাকলেও তো আমাদের তা নেই। আগে ভাড়া দিতাম ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, এখন ১ লাখ ২০ হাজার। এর সঙ্গে আবার বিদ্যুৎ বিল ও কর্মচারীদের বেতন আছে। আগস্টে আমার ২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। পরের মাসেও লস ছিল।’
ম্যাডশেফের ব্রাঞ্চ ইনচার্জ ইশান আল মামুন জানান, তাদের আসন সংখ্যা ছিল ৬০, কিন্তু করোনার কারণে তা কমিয়ে ৩৫ করা হয়েছে। বিক্রি কমেছে ৩০ শতাংশ। স্বাস্থ্যবিধির জন্য যোগ হয়েছে বাড়তি খরচ।
ধানমন্ডির গুহা দ্য কেভ কিচেনের স্বত্বাধিকার রাহাত হাবিব বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আমরা মোটামুটি লসের মধ্যেই আছি। পকেট থেকে টাকা দিয়ে চলছি। এই বছর প্রায় ৭ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ৪ মাস লকডাউন থাকলেও বাড়িওয়ালাকে ভাড়া দিতেই হয়েছে।
হার্ট ওয়ার্ল্ডের পরিচালক তাহসিন রব প্রিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা লকডাউনের আগে থেকেই ডাইনিং বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এরপর আমরা হোম ডেলিভারি দেওয়া শুরু করলাম অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে। প্রথম ২-৩ মাস রেস্তোরাঁ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ওই সময় নিজেদের সুরক্ষিত রেখে কীভাবে রেস্টুরেন্ট চালাবো সে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আবার অর্ধেক স্টাফকে অর্ধেক সবেতনে ছুটিও দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, লকডাউন খুলে দেওয়ার প্রথম মাসে আমরা ক্রেতাদের একটা বড় ধাক্কা পেয়েছি। কিন্তু পরের মাস থেকে আবার কমতে শুরু করেছে। তখন ভেবেছিলাম এভাবে চললে হয়তো ৩ মাস পর সামলে উঠতে পারবো। কিন্তু তেমনটি হয়নি। অনলাইনে ১০ শতাংশের মতো অর্ডার পেতাম। এখন ডাইনিং খুলে দেওয়ার পর সেটা আরও কমেছে। এর বড় কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ। এ ব্যবসার বড় ক্রেতা কিন্তু তরুণরা। তারপরও এখন কোনোমতে টিকে আছি। বাড়িওয়ালা ভাড়া কমিয়েছেন। কিস্তিতে ভাড়া পরিশোধের সুবিধাও রেখেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধু ধানমন্ডিতেই অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে। কেউ কেউ মালিকানা হস্তান্তর করেছেন। বন্ধ হয়ে যাওয়ার তালিকায় আছে ইউ কি সেন্ট্রাল, ক্যাফে ফিফটি। এ ছাড়া ট্রিট ক্যাফে ও ক্যাফে দ্রুমের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। এ সবই হয়েছে করোনাকালীন।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব এম. রেজাউল করিম সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সারাদেশে ২০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধের পথে। করোনার কারণে আমাদের মূল সমস্যা ছিল আস্থাহীনতা। ক্রেতারা সংক্রমণের ভয়ে রেস্তোরাঁয় আসা বন্ধ করে দিয়েছিল। সমস্যাগুলো আমরা সরকারকে জানিয়েছিলাম। আমাদের সহযোগিতা করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তা পাইনি। প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা ঘোষণা করলেও ব্যাংক আমাদের তা দিতে চায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা কিছু পায়নি। আমরাও ঋণ নিয়ে যে কিছু করবো সে উপায় নেই।’