তাজরীন গার্মেন্টসের ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা বলেন, আট বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও আমরা তাজরীন গার্মেন্টসের আহত শ্রমিকরা দেশি/বিদেশি মাধ্যম থেকে কিছু অনুদান/আর্থিক সহায়তা ছাড়া আর কিছুই পাইনি। সেই অনুদানের তিন-চার গুণ বেশি আমাদের চিকিৎসায় খরচ হয়ে যায়। আমরা অনেকেই দেশের বাড়িতে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু বিক্রি করে এবং ধার-দেনা করে চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছি। আমাদের অনেকেরই গ্রামে গিয়ে দাঁড়াবার জায়গাটুকুও আর নেই। কাজ করার সক্ষমতা না থাকার কারণে গত আট বছরে আমাদের একটি টাকাও উপার্জন নাই। বাড়িভাড়া জোগাড় করতে না পারায় বাড়িওয়ালারা দুর্ব্যবহার করে, বাড়ি থেকে বের করে দেয়। সে কারণেই আমরা গত আট বছরে বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয়ে আমাদের সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ, যথাযথ পুনর্বাসন ও দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেনি। ফলে আমাদের জীবন দিনকে দিন আরও মানবেতর হয়ে পড়েছে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দাবি আদায়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান গ্রহণ করছি। আমাদের সঙ্গে অনেকের শিশু সন্তানেরাও আজ প্রেস ক্লাবের সামনে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, তাজরীন গার্মেন্টসের কর্মী যারাই বেঁচে আছে তাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। সেই চিকিৎসার খবর কেউ কোনোদিন নেয় নাই। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ১২২ কোটি টাকা আছে। সেই তহবিল থেকে এই শ্রমিকদের দেওয়া যায় না? আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে সেটা দেওয়া সম্ভব। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, আর কয় কোটি টাকা লাগবে এদের ক্ষতিপূরণ দিতে? এই ক্ষতিপূরণ আদায়ে চলমান যে আন্দোলন সেখানে আমরা থাকবো। আজকের কাফনের কাপড় পরে কর্মসূচি পালনের পর আরও কর্মসূচি চলবে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকরা প্রেস ক্লাবের সামনে ৬৮ দিন ধরে পড়ে আছে। যখন ঘটনা ঘটেছে তখনই বলা হয়েছিল মালিক ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু আজ আট বছর হয়ে গেলো, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনও খবর নাই। সরকারেরও কোনও তৎপরতা আমরা দেখছি না। যদি না পায় এই শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ তাহলে কী করবে তারা? আমরা আহ্বান জানাবো সরকারকে, যেন মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয় এই ক্ষতিপূরণ আদায় করার জন্য। সরকারের তো অনেক সুযোগ আছে, শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে তহবিল করা আছে।
সমাবেশের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়েন নেতারা। এসময় তারা ব্যারিকেডের সামনে কাফনের কাপড় পড়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। এ সময় নেতারা দাবি না মানলে সামনে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।