‘মধ্যস্বত্বভোগীদের নিবন্ধনের প্রধান ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে বিএমইটি’

ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদসাবেক মন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মনে করেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের নিবন্ধনের প্রধান ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। রবিবার (২৯ নভেম্বর) রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়মিতকরণ বিষয়ে এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। 

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘২০১৮ সালে নতুন সংসদ আসার পর ২-৩টি সভার মধ্যেই আমরা সমস্যাটি এনেছিলাম। আমরা সভা করে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলাম। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী আগ্রহের সঙ্গে বলেছেন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন যে, মধ্যস্বত্বভোগীদের নিবন্ধন করতে হবে। গত অক্টোবরে আমরা বায়রার সঙ্গে সভা করেছি।  তারা কথা দিয়েছে যে, নিবন্ধনে  যাবে। এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এ বিষয়ে অনেক সচেতন। তিনি বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছেন। এ জন্য তিনি কমিটিও করেছেন। আমি আশা করবো এটা হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই নিবন্ধনের প্রধান ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে বিএমইটি। রিক্রুটিং এজেন্সির ১০টি সাব এজেন্ট থাকতে পারে। আমাকেই ঠিক করতে হবে কাকে সাব এজেন্ট হিসেবে রাখবো। নির্ধারণ করার পর তারা বায়রাকে জানাবে এবং রেজিস্ট্রেশন করবে বিএমইটি। যেই লোকগুলো বর্তমানে আছে, তারাই কাজ করুক এবং নিবন্ধন করুক। যাতে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। যখন একটা মানুষ টাকা দিয়েও বিদেশে যেতে পারেন না, সেটার ক্ষতি পোষানোর একটা ব্যবস্থা আমাকে করতে হবে।’

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমি মনে করি, উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও অফিসকেও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আইন করা হলে আমাদের ‘দালাল’ শব্দটি বাদ দিতে হবে। তারা যে কাজগুলো করছে, তাদেরকে দালাল নামে অবহিত করলে অন্য অর্থ মনে হতে পারে। বায়রার অনেক সমালোচনার বাইরে বলতে চাই, রিক্রুটিং এজেন্সি কিন্তু আজকে আমাদের অর্থনৈতিক একটা স্তম্ভ তৈরি করে দিয়েছে। যার ওপর সব ক্রাইসিসের পরও বাংলাদেশ স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে।  ২০০৮ সাল এবং বর্তমান মহামারিতে আমাদের যে ক্রাইসিস হয়েছে, সেখানে কিন্তু এই সেক্টর দাঁড়িয়ে ছিল। জুলাই মাসে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আমরা  বলি, এক কোটি মানুষ দেশের বাইরে আছেন। আর যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, এখানে বায়রার অনেক বড় অবদান আছে। কিন্তু বায়রাকেও এখন দালালদের নিয়মিতকরণ করতে হবে।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘আমাদের প্রথমত মাইগ্রেশনের ন্যারেটিভটাকে পজিটিভ করতে হবে। তার পথে বড় একটা বাঁধা হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা হয়তো ভালো কাজ করছেন না, কিন্তু তাদের একটি অবদান এই সেক্টরে আছে। আমাদের অবশ্যই রিক্রুটিং এজেন্টদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তারা অবশ্যই সম্মানজনক স্বীকৃতি পাওয়ার মতো কাজ করছেন। আমার মতে, রিক্রুটিং এজেন্টরা তাদের প্রতিনিধির নাম বায়রার মাধ্যমে দেবেন এবং সেটা অনুমোদন দেবে বিএমইটি। এটা করলে অবকাঠামোর ভেতরে যে জবাবদিহিতার জায়গা আনার কথা বলা হচ্ছে, তার সবই সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন যে, দলালাদের দৌড়াত্ম্য কমাতে হবে যেকোনও মূল্যে। এর অর্থ তিনি এটা বলেননি যে, তাদের বাদ দিতে হবে সিস্টেম থেকে। যতদিন না আমরা বিকল্প কিছু করতে পারছি, আমাদের মধ্যস্বত্বভোগী সিস্টেমে থাকতে হবে। আমরা যে তাদের নিবন্ধন করবো, এর জন্য সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হতে হবে বায়রাকে। বায়রাকে পরিচালিত করার জন্য আমরা যে কমিটি করেছি, সেটার কাছ থেকে আমরা রেজাল্ট চাই। কারণ, দিন শেষে কোনও কাজই হবে না, এরকম অবস্থা আমরা কোনোভাবেই কাম্য করি না। আমাদের মন্ত্রীর আন্তরিকতার অভাব নেই। মন্ত্রণালয়ের সাপোর্টের কোনও ঘাটতি নেই।’    

ওয়েবিনারের শুরুতেই মধ্যস্বত্বভোগীদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার একটি মডেল তুলে ধরেন রামরু’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামিম হায়দার চৌধুরী, এরোমা দত্ত, বিএমইটি’র মহাপরিচালক শামসুল আলম, বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ‘প্রকাশ প্রকল্পের’ পরিচালক গেরি ফক্স, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শাহিন, প্রকাশ প্রকল্পের সিনিয়র আইবিপি ম্যানেজার শারমিন লিরা প্রমুখ।