‘সঠিক পরিকল্পনা না করলে ভবিষ্যতের নগর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে’

১১

বাড়ছে নগরের জনসংখ্যা,  বাড়ছে পরিধি। সঠিক নগর পরিকল্পনা করা না গেলে ভবিষ্যতে ঢাকাসহ নগরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। তাই এখনই নিতে হবে উদ্যোগ।  দরিদ্রবান্ধব, জলবায়ু এবং দুর্যোগকে মাথায় রেখেই এইসব পরিকল্পনা কর‍তে হবে। বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর)  ‘দরিদ্রবান্ধব, জলবায়ু ও দুর্যোগ সহনশীল নগর উন্নয়ন: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যারা নগরে থাকি, সেখানে আবাসন সমস্যা সব সময়ই আছে। আবাসন সংকট সমাধানে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো উঁচু উঁচু বিল্ডিং করছে,  কিন্তু সেখানে সব সঠিক পরিকল্পনা করে করা হচ্ছে, তা বলা যায় না। আবাসন করলাম, কিন্তু যোগাযোগের জায়গা রাখলাম না। আবার যোগাযোগের জায়গা রাখলাম, কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষার ব্যবস্থা করলাম না। এইসব বিষয়েই গুরুত্ব দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কাজের কারণে গ্রাম থেকে মানুষ শহরে আসবেই। কিন্তু ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত লোক তো রাখা যাবে না।  সেক্ষেত্রে শহরের সীমানা বড় করতে হবে। নগরের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রামগুলোতে শহরকেন্দ্রিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দরকার। এরজন্য সমন্বিত পরিকল্পনা করছে সরকার।’

ব্র্যাকের আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের উদ্যোগে সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের প্রফেসর ইমিরিটাস ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, ‘নগরে জনসংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতে গ্রাম থেকে আসা মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে। বাড়বে দারিদ্র্যতাও। সঠিক নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা করা না গেলে ভবিষ্যতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে নগরগুলো। এতে শহরের ওপর চাপ বাড়ার পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, আবাসন সমস্যা, বিদ্যুৎ সমস্যা, পরিবহন সমস্যা বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু উঁচু ও বড় বিল্ডিং করলেই হবে না, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ সিস্টেমের সঙ্গে পাম্পের ব্যবস্থাও থাকতে হবে।’ আইনুন নিশাত বলেন,  ‘জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা না থাকলেও এর প্রভাবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বাড়বে, বাড়বে উপকূলীয় এলাকা। নদী ভাঙন বাড়বে, বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বাড়বে, বন্যা আগের চেয়ে বেশি হবে। এবার শীতের তীব্রতা আগের চেয়ে বেশি হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা মাত্র দুই ডিগ্রি বাড়লেই বিশ্বে দেখা দেবে খাদ্য সংকট। খড়া পরিস্থিতি আরও বাড়বে। তাই সমন্বিতভাবে সঠিক নগর পরিকল্পনা করা জরুরি।’ 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল হক বলেন, ‘শহরের উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান, মশা নিধনে গত মার্চ  মাস থেকে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। আমরা হকারদের উচ্ছেদ করতে চাই না। তাদের সঠিকভাবে পুনর্বাসন করতে চাই। এক্ষেতে রেজিস্ট্রেশন করার চিন্তা করা হচ্ছে। বস্তিও উচ্ছেদ করতে চাই না। তাদের জন্য মডেল পরিকল্পনা করা হচ্ছে। খাল খনন ও জলাবদ্ধতা নিরসনেও আমরা কাজ করছি।’ নগরের এসব সমস্যা সমাধানে শুধু পরিকল্পনা নয়, সবার সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

ওয়েবমিনারে  আইনুন নিশাতের প্রবন্ধ ছাড়াও আরও দুইটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, খুলনা,সৈয়দপুর, রংপুর, সিরাজগঞ্জ,ঝিনাইদহ,সাভার, ফরিদপুর, সিলেটের মেয়ররা অনুষ্ঠানে তাদের এলাকার সমস্যা ও সমাধানে নেওয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘দেশের যেসব শহর এখনও নতুন, সেসব শহর এখনও সুন্দর করে সাজানোর সুযোগ আছে। আমরা যৌথভাবে সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজটি করতে পারি।’