নাসিরনগরে ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবেদনে গরমিল, ১৩ জনকে তলব

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ৭ বছরের এক মেয়েশিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১১ বছর বয়সী আরেক ছেলে শিশুর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একাধিক চিকিৎসক ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন দেন। এ কারণে তদন্তে গাফিলতির জন্য সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট ১০ চিকিৎসক এবং এসপিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।

রবিবার (১৭ জানুয়ারি) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ডাক্তারদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পুলিশদের ক্ষেত্রে আইজিপিকে পৃথক ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন এবং তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন আদালত।

১১ বছর বয়সী ছেলে শিশুটির জামিন আবেদনের ওপর শুনানিতে দাখিল করা নথিতে ধর্ষণ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য বা অমিল পাওয়ায় রবিবার হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।

আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. শাহপরান চৌধুরী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম।

এর আগে ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নির্যাতনের শিকার শিশুর পিতা নাসিরনগর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৪ সেপ্টেম্বর তার ৭ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মামলার আসামি তার প্রতিবেশী, যার বয়স উল্লেখ করা হয় ১৫ বছর।

মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে পরদিন নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে ৮ সেপ্টেম্বর শিশুটিকে জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একটি ডাক্তারি প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

এদিকে আসামি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করলে গত ৩ নভেম্বর এর শুনানি হয়। সেদিন আসামির বয়স প্রমাণের জন্য তার জন্ম সনদ দাখিল করা হয়। জন্ম সনদ অনুযায়ী তার বয়স ছিল ১০ বছর। এ অবস্থায় হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলার কেস ডকেট (সিডি) এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

পরে তদন্ত কর্মকর্তা আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একইসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা ও নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেন। এ সময় জেলা সদর হাসপাতাল থেকে ১২ সেপ্টেম্বরের দেওয়া একটি ডাক্তারি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সে প্রতিবেদনেও অসঙ্গতি দেখার পর আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা জেলা সদর হাসপাতালের আরেকটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। সে আবেদনেও নির্যাতনের শিকার শিশুর ডাক্তারি পরীক্ষায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একাধিক চিকিৎসক ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন দেওয়ায় এবং তদন্তে গাফিলতি প্রতীয়মান হওয়ায় এসব আদেশ দিলেন হাইকোর্ট।