মানবিকতার সুযোগ নিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতো শাকিল

জাসদ নেতা হামিদুল হত্যায় জড়িত চার জনকে সোমবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর উত্তর মুগদা ও কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। শনিবার হাইকোর্ট মাজার সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠের সামনে ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, সোহেল ওরফে এরাবিয়ান হোসেন, জাহিদ হোসেন, শুকুর আলী, শাকিল (২) ওরফে ডুম্বাস ও সোহেল মিয়া। তাদের হেফাজত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাকু, একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোবাইল ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া চার জনের মধ্যে শাকিলের একহাত নেই। সে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালায়।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

উদ্ধার করা মোবাইল ও ছুরি

তিনি বলেন, জাসদ নেতা হামিদুল ইসলাম ২৫ বছর ধরে সেগুনবাগিচা হাইকোর্ট এলাকায় ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা করতেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি সেগুনবাগিচা এলাকায় থাকতেন। ২৩ জানুয়ারি হামিদুল বাসা ভাড়ার টাকা নিয়ে সেগুনবাগিচার বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। ডিবি রমনা বিভাগ এই মামলার ছায়াতদন্তের পর এই ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে হাইকোর্টের মাজার গেটের বিপরীত পাশে এসে অবস্থান করে। শাকিল ওরফে ডুম্বাস ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাকি ৪ জন হাইকোর্টের ঈদগাহ মাঠের সামনে ফুটপাতের ওপরে হামিদুলের গতিরোধ করে তার কাছ থেকে একটি স্যামসাং এ ২১-এস মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। ভিকটিমের পকেটে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি চিৎকার করেন। তখন সোহেল চাকু দিয়ে আঘাত করলে মারা যায় হামিদুল ইসলাম।

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক শাকিলের হাত কাটা। মানবিক কারণে পুলিশ তাকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে বাধা দেয়নি। ঢাবি ক্যাম্পাস এলাকায় সে নির্বিঘ্নে রিকশা চালায়। গ্রেফতারের পর জানা যায় সে পেশাদার ছিনতাইকারী।

হাফিজ আক্তার বলেন, অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে গ্রেফতার সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ১০টি করে ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। প্রত্যেকবারই তারা জামিনে বেরিয়ে একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

ছিনতাই বাড়ায় কি ঢাকায় টহল-নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কতগুলো সামাজিক প্রভাব কাজ করে। যেমন, করোনা ক্রান্তিকালে কিন্তু প্রতারণা ছিনতাইসহ অনেক ধরনের অপরাধই বৃদ্ধি পায়, ঘটতেই থাকে। ঢাকায় দুই কোটি মানুষ। পুলিশের কাজ আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখাসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর অপরাধীদের কাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এড়িয়ে অপরাধ সংঘটিত করা।

তিনি বলেন,  ‘প্রতিরাতেই যে ছিনতাই হচ্ছে তা নয়, তবে প্রায়শই ঘটছে। সেজন্যই আমরা টহল জোরদার করেছি। আমরা গত সপ্তাহে অনেক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছি। এবার ছিনতাইসহ খুনের ঘটনায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা বিট পুলিশিং বৃদ্ধি করেছি।’

ছিনতাইয়ের মামলা বা অভিযোগ থানায় পুলিশ নিতে চায় না–এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি’র এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘আমরা থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে বলবো ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা। সে রকম কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বলা যাবে না ছিনতাই বৃদ্ধির সংখ্যা। আর থানায় ভুক্তভোগীদের ছিনতাইয়ের মামলা না নিলে ঊর্ধ্বতনদের জানাবেন। পাশাপাশি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা না করার প্রবণতাও রয়েছে। সেটা না করে থানায় অভিযোগ করতে নগরবাসীকে অনুরোধ জানান তিনি।