শ্রদ্ধায় ভাসলেন সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর

শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজউদ্দীন হোসেনের ছেলে সাংবাদিক শাহীন রেজা নূরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন লেখক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সর্বস্তরের মানুষ। বুধবার (৩ মার্চ) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহ নিয়ে আসার পর বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সকাল ১১টায় তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার নেতৃত্ব গড়ে ওঠা সংগঠন প্রজন্ম ৭১, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপকমিটি, গণ সংগীত সমন্বয় পরিষদ, র‌্যামন পাবলিশার্স, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে অধ্যাপক ড. একে আজাদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে শাহরিয়ার কবির, সাংস্কৃতিক সংগঠন উঠোন, বাংলাদেশ আবৃতি শিল্পী সংসদ, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ।সাংবাদিক শাহীন রেজা নূরের প্রতি শ্রদ্ধা

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শাহীন রেজা নূর।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল কালাম আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা একজন নক্ষত্র হারালাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা স্বপক্ষের লোক, যাদের ওপর আমরা সব সময় নির্ভর করতে পারতাম, সেরকম একজন লোক চলে গেলেন। আমরা তার মাগফিরাত কামনা করি।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তার প্রচণ্ড রকমের একটা আগেব কাজ করতো। যখনি তিনি কলম ধরেছেন, কথা বলেছেন, তখনি স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, তার জন্য কাজ করেছেন।’সাংবাদিক শাহীন রেজা নূরের প্রতি শ্রদ্ধা

শাহীন রেজা নূরের স্ত্রী খুরশিদ জাহান শাহীন বলেন, ‘তিন বছর ধরে কানাডায় থাকলেও তার মন সবসময় দেশে পড়ে থাকতো। প্রতি মুহূর্তে তিনি দেশে এসে দেশের জন্য কিছু করতে চাইতেন। কিন্তু এভাবে তাকে দেশ আসতে হবে আমি ভাবতে পারিনি। তিনি ছিলেন রত্নভাণ্ডার। সব বিষয়ে তার পদচারণা ছিল।’

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে  শাহীন রেজা নূরের মরদেহ দেহ দেশে এনে শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘শাহীন রেজা নূর তার বাবা শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্নের বাংলাদেশ, ত্রিশ লাখ শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ, একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়বার স্বপ্ন তিনিও দেখেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তিকে প্রতিরোধ, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধকরণসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছেন। তিনি স্পষ্টভাষী ছিলেন। তিনি একজন নির্লোভ মানুষ ছিলেন।’সাংবাদিক শাহীন রেজা নূরের প্রতি শ্রদ্ধা

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্যে রাখেন শাহরিয়ার কবির, কবি শাহানা আক্তার মুহুয়া, অধ্যাপক আতিক উদ্দীন, তৌহীদ রেজা নুর, বেগম মোস্তারি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি লেখক মফিদুল হকসহ আরও অনেকে।

এর আগে সকাল ৬টায় তার মরদেহ বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর আসাদ এভিনিউয়ে তার বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে তারা পরিবার ও অনুরাগীরা তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পরে মোহাম্মদপুর ইকবাল রোড মসজিদে সকাল ১০টায় তার প্রথম নামাজ-ই- জানাজা দেওয়া হয়। জানাজা শেষে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে শহীদ মিনার নিয়ে আসা হয়।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৩টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুন-

সাংবাদিক শাহীন রেজা নূরের ইন্তেকাল, প্রধানমন্ত্রীর শোক