গৃহকর্মীদের শ্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান

দেশের প্রায় ১৭ লাখ গৃহকর্মীর অধিকার সুরক্ষা এবং তাদের শ্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সরকারসহ সকল পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এটি নিশ্চিত করতে হলে যত দ্রুত সম্ভব গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫ বাস্তবায়ন জরুরি। তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় আনতে হলে সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সংগঠন ও অন্যান্য পক্ষগুলোকে এ নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস- ২০২১ উপলক্ষে বুধবার (৩ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশের ‘গৃহকর্মীদের অধিকার ও কল্যাণ: নীতি বাস্তবায়নে সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা একথা বলেন। গণস্বাক্ষরতা অভিযান ও অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে সিকিউরিং রাইটস ফর উইমেন ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স (সুনীতি) প্রকল্পের আওতায় মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে. এম. আবদুস সালাম, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ।

সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার পিনাস আক্তার । তিনি বলেন, ২০১৬ - ২০১৭ সালের শ্রম শক্তি জরিপ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের কর্মজীবী নারীদের একটি বড় অংশ (১.৬৯ মিলিয়ন মানুষ) গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত যাদের প্রায় ৯০ শতাংশ নারী। এই বিশাল জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তাদের অধিকার এবং শোভন কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কোনও প্রাতিষ্ঠানিক নিরীক্ষণ ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত কার্যকর হতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, ২০২০ সালে (জানুয়ারি- ডিসেম্বর) মোট ৪৪ জন গৃহকর্মী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১২ জনের রহস্যজনক মৃত্যুসহ মোট ১৬ জন নিহত হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১২ জন। এছাড়া শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চরমভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ১২ জন, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন। এইসব ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট থানায় একটি করে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে কে. এম. আবদুস সালাম বলেন, সরকারী পর্যায়ে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫ নিয়ে যথেষ্ট কাজ হচ্ছে। বর্তমানে এ বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য সরকারের মনিটরিং সেল আছে। নীতিটির আওতায় শিশুশ্রমের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, করোনাকালে সরকার ২৩টি খাতে সহায়তা দিয়েছে এবং তার মধ্যে সর্বপ্রথম হল শ্রমজীবী মানুষের জন্য সহায়তা। তবে গৃহকর্মী সুরক্ষা কল্যাণ নীতিটি বাস্তবায়নে এখনও কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। বিষয়টিকে সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় আনার বিষয়ে তার মন্ত্রণালয় কাজ করে যাবে বলে জানান শ্রম সচিব।

অনুষ্ঠানে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, গৃহকর্মে নিয়োজিত রয়েছে একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তাদের কথা আমাদের ভাবতে হবে এবং আমাদের প্রত্যেকের ঘর থেকেই সেটি আমাদের শুরু করতে হবে। গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫ বাস্তবায়নের অবস্থা কি, এটিকে আইনে রূপান্তর করা যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।