ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

যেদিকেই চোখ যায়, শুধু মেয়র-কাউন্সিলরদের ছবি

রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন করতে ঢাকার আগের দুই মেয়র বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাতে বেশ কিছু সময় পোস্টার, ফেস্টুনের জঞ্জালমুক্ত ছিল ঢাকা। নতুন মেয়ররাও একই ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার ঢাকা দক্ষিণে দেখা যাচ্ছে তার উল্টোটা। খোদ মেয়র ও তার কাউন্সিলরদের ছবিযুক্ত পোস্টার, ব্যানারেই ছেয়ে যাচ্ছে ডিএসসিসি।

নগরবাসীর অভিযোগ, পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার দায়িত্ব যাদের হাতে, তাদের হাতেই যদি এমন দৃষ্টিদূষণ ঘটে, তা মেনে নেওয়া যায় না।

ব্যানারআগের দুই মেয়র একযোগে নগরীর প্রতিটি এলাকা থেকেই অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার অপসারণ করেছিলেন। তখন ঢাকা দক্ষিণে বিভিন্ন আকারের ৭৩০টি ডিজিটাল বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছিল। এতে কমেছিল ঝড়ে বিলবোর্ড উড়ে গিয়ে প্রাণহানির ঝুঁকি। উত্তরেও একই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে আনিসুল হকের মৃত্যুর পর সেটা ভেস্তে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ডিএসসিসির ২১ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত। এই এলাকার মোড়ে মোড়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদের ছবিযুক্ত বিশাল সব বিলবোর্ড। বিলবোর্ডগুলোতে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের ছবিও আছে। ফুটপাতের গ্রিলের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে রাখা এসব বিলবোর্ড সামান্য ঝড় বা বাতাসেই উড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

ব্যানারএ ছাড়া শাহবাগ, বাটা সিগনাল, পলাশী, শহীদ মিনার, টিএসসিসহ ওয়ার্ডটির বিভিন্ন স্থানে একই চিত্র দেখা গেছে। বাটা সিগন্যালে রয়েছে মেয়রের বিশাল আকারের ছবিযুক্ত বাঁশের গেট। তাতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এসব বিলবোর্ডের কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশনের লোগোও বসানো হয়েছে।

জানতে চাইলে কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যানারগুলো আমি লাগাইনি। ভক্ত ও অনুসারীরা লাগিয়েছে। দ্রুত অপসারণ করা হবে।’

গেটে ছবিএকই চিত্র দেখা গেছে ২০ নম্বর ওয়ার্ডেও। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন তার কার্যালয়ের সামনেই যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাঁশের খুঁটির মধ্যে নিজের বিশাল ছবিসহ মেয়র ও যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের ছবি দিয়ে বিলবোর্ড তৈরি করেছেন।

পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড়েও বাঁশের একই রকম বিশাল গেট বানানো হয়েছে। তাতেও  মেয়রসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ডজনখানেক নেতাকর্মীর ছবি। একটু সামনে এগোলোই ইংলিশ রোড মোড়ে স্থানীয় ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রহমান মিয়াজীর ছবিযুক্ত বিশাল গেট। তাতেও ছবির ছড়াছড়ি।

ব্যানারঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজেও অপরিকল্পিতভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মোড়ে মোড়ে বিলবোর্ড ও ব্যানার লাগিয়েছে। নগর ভবনের সামনের ফুটপাতেই এসব ব্যানার দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।

তালিকায় পিছিয়ে নেই সংসদ সদস্যরাও। পলাশী মোড়ে মেয়র তাপসের ছবিযুক্ত স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের বিশাল দুটি ফেস্টুন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

ব্যানারএ বিষয়ে কথা হয় নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই ডিজিটাল যুগে এমন প্রচারণা মেনে নেওয়া যায় না। কোনও স্থানে যদি নাগরিকদের প্রতি নগরপিতার বার্তা থাকে সেটা ভিন্ন বিষয়। মেয়র কাউন্সিলররা যদি নাগরিকদের মন জয় করতে পারেন, তবে এত বিলবোর্ড ব্যানারের প্রয়োজন কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল বিলবোর্ড সিটি করপোরেশনের আয়ের একটি উৎস। সেটা বাদ দিয়ে আবার অ্যানালগে চলে গেলে করপোরেশনেরই ক্ষতি। সিটি করপোরেশন আয় করবে, আবার নগরীতে শৃঙ্খলা আনবে, এমনটাই হওয়া উচিত।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাউন্সিলরদের এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর সতর্ক করা হবে না। এবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেবো।’