‘অর্ধেক যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না’

‘সকাল থেকে বাস খালি যাইতেসে, নির্দিষ্ট টাইম পরপর ছাড়তেসি। সকাল বেলা আধা কিলো লাইন লাগতো কাউন্টারে আর আজকে যাত্রীর জন্য কাউন্টারে বাস বসা। অর্ধেক যাত্রীও পাওয়া যাইতেছে না। তেলের টাকা আর বেতন উঠবো নাকি আল্লাহই জানে।’ এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন মিডলাইন পরিবহনের টাইমকিপার মিজানুর রহমান।

করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার আরোপিত ‘কঠোর বিধিনিষেধের’ মধ্যেই চালু হয়েছে গণপরিবহন। মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, লকডাউনে মহানগরে চলাচলের ভোগান্তি বিবেচনায় এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাস চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, বুধবার থেকেই ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় বাস চলাচল শুরু হবে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শুধু দিনের বেলায় চলবে বাস।

বাস চালানোর জন্য যেসব শর্ত আছে তার মধ্যে আছে ৬০ ভাগ বেশি ভাড়া নিয়ে বাসগুলোতে প্রতি দুই আসনে একজন যাত্রী পরিবহন করতে হবে।  আর লকডাউনে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চালু থাকবে বাস সেবা। যাত্রী ওঠার আগে প্রতিবার ট্রিপ শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করতে হবে আর মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়।

বুধবার সকাল ৮টা থেকে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত গণপরিবহন থাকলেও যাত্রীর তেমন চাপ নেই। অফিস টাইমে যাত্রীদের বাসের জন্য ছোটাছুটির দৃশ্য নিত্যদিনের বিষয় থাকলেও আজ যেন তার উল্টো চিত্র ছিল। সকাল থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রায় ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর দেখা যায় মতিঝিল রুটের বাসগুলো একে একে ছেড়ে যাচ্ছে। বাসের প্রতি দুই সিটে একজন করে যাত্রী থাকলেও বেশ কিছু সিট ফাঁকা আছে। কয়েকটি বাসের কাউন্টারে প্রতিদিন অফিস টাইমে যাত্রীদের লাইন থাকলেও আজ বাসগুলো দাঁড়িয়ে ছিল যাত্রীর অপেক্ষায়।

সময়ে সময়ে হঠাৎ কিছু যাত্রী একসঙ্গে এলেও লাইনের দৈর্ঘ্য খুব একটা বেশি বড় নয়। তাতে এক বাসের যাত্রী হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ সময় রক্ষার কারণে যাত্রীর অপেক্ষা না করে খালি সিট রেখেই বাস ছেড়ে দিচ্ছেন রাস্তা থেকে যাত্রী পাওয়ার আশায়।

তরঙ্গ প্লাস পরিবহনের চালক রশিদ বলেন, ‘সকালে অফিস টাইমে গাড়ি নিয়ে বসে থাকার উপায় থাকে না অন্যান্য দিন। আজকে যাত্রী নাই। বেতন উঠবো কিনা জানি না।’

   

তবে লেগুনা চলছে রাস্তায় পর্যাপ্ত যাত্রী নিয়েই। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী তারা ১২ জনের জায়গায় পেছনে ৮ জন যাত্রী পরিবহন করছে। তবে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। মোহাম্মদপুর থেকে শ্যামলীগামী কয়েকজন লেগুনা চালকের কাছে জীবাণুনাশক কিংবা হ্যান্ড সেনিটাইজার আছে কিনা জানতে চাইলে তারা মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দেন। তাছাড়া গাড়ি জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করার মতো ঘটনাও চোখে পড়েনি। যদিও চালকরা দাবি করছে গ্যারেজ থেকেই স্প্রে করে নিয়ে আসা হয়েছে।

বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকলেও সেটা ভেতরে পড়ে থাকে, সেটির ব্যবহার করছেন না চালক কিংবা হেল্পার। গাড়িতে ওঠার আগে যাত্রীকে হ্যান্ড স্যানিটাইইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করার কথা থাকলেও সেরকম কোনও কিছুই চোখে পড়েনি। মিডলাইন পরিবহনের টাইমকিপার মিজানুর রহমানের কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন ভেতরে সব আছে।

মতিঝিলগামী যাত্রী সোহেল জানান, বাসের ভেতরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা জীবাণুনাশক স্প্রে করার কোনও লক্ষণ তিনি পাননি।

 

ছবি: নাসিরুল ইসলাম