লকডাউনে মানবেতর জীবনযাপন করছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা

দেশব্যাপী চলছে লকডাউন। মানুষ যথাসম্ভব ঘরে থাকার চেষ্টা করছে। সীমিত আকারে যানবাহন চললেও যাত্রী সীমিত। এমতাবস্থায় কাজ হারিয়ে বেকার অনেক নিম্ন আয়ের মানুষরা। কেউ কেউ খাদ্যাভাব পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে কাজে বের হলেও আয়-রোজগার একদম নেই বলছেন তারা। করছেন মানবেতর জীবনযাপন। কোনও সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতাও পাচ্ছেন না তারা।

নোয়াখালীর সদর থানার দিনমজুর আজাদ মিয়া থাকেন অপরের আশ্রয়ে। দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ চার সদস্যের এই পরিবারের একমাত্র অর্থ যোগানদাতা তিনি। বলেন, ‘দিনমজুরি করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোনোভাবে দিনাতিপাত করতাম। কাজ না থাকলে মাঝে মাঝে না খেয়েও থাকতাম। এই লকডাউনে কাজ নেই, ইনকাম নেই। খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ছোটো ছোটো দুইটা বাচ্চার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। যে জায়গায় ঘর দিয়ে আছি তাও অন্যের। গত বছর লকডাউনে সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছুটা সহযোগিতা পেলেও, এই লকডাউনে কিছুই পাচ্ছি না। কোনোরকম ধার-উধার করে একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।’

received_503113104434555

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় দুই বছর যাবত রিকশা চালান লালমনিরহাটের আনারুল।  লকডাউনে আর সবার মত তিনি বাড়ি ফিরতে পারেননি। কারণ পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভার তার কাঁধে। তিনি বলেন, ‘একজনের আয় দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার চালানো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই কঠিন। এখন লকডাউনে আয়-রোজগার নেই। খুবই কষ্টে দিন যাচ্ছে। ঘরে বৃদ্ধ মা-বাবা, তাদের ওষুধও কিনতে পারছি না। কেউ সহযোগিতার কোনও হাত বাড়াচ্ছে না।’

নোয়াখালীর মনির হোসেন দশ বছর যাবত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শরবত বিক্রি করছেন। পরিবার নিয়ে থাকেন কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। এই লকডাউনে করছেন মানবেতর জীবনযাপন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচর এলাকায় একটা রুম ভাড়া নিয়ে থাকি। গত লকডাউনের রুম ভাড়াটা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তেমন কোনো আয় নেই। এরমধ্যেই আবার লকডাউন দেয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছে। এখন খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। করোনার প্রথম দিকে কিছু সহযোগিতা পেলেও, এখন তাও পাচ্ছি না।’

শাবনূরের দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ। থাকেন রাজধানীর নাখালপাড়ায়। স্বামীসহ পাঁচ বছর যাবত চুড়ি বিক্রি করছেন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। শাবনূর বলেন, ‘লকডাউনে ব্যবসার অবস্থা ভালো না। যে দুই একজন আসে তারাও কেনা দামের চেয়ে কম বলে। ব্যবসা করতে আর ইচ্ছে হয় না, কিন্তু না করলে হলে খাব কী? ব্যবসার যা অবস্থা তাতে দৈনিক খাবার জুটাতেও কষ্ট হচ্ছে।’