ছাঁটাই আতঙ্কে পোশাক শ্রমিকরা, সরকারকে শ্রমিক সংগঠনের চিঠি

কর্মস্থলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত, যাতায়াত ও ঝুঁকিভাতা প্রদান এবং কর্মী ছাঁটাই বন্ধসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন পোশাক শ্রমিকরা। সোমবার (১৯ এপ্রিল) সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এসব দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে পোশাক শ্রমিকদের সংগঠন ‘সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন’। সংগঠনটির সভাপতি নাজমা আক্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, ‘শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই পোশাক কারখানা লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। কিন্তু কারখানার মালিকরা সরকারের বিধিনিষেধ মানছেন না। শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়টি নজরে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক রফতানিকারক ও মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান  বলেন, ‘কোনও শ্রমিককে যেন ছাঁটাই না করা হয় সে ব্যাপারে আমরা কারখানার মালিকদের সতর্ক থাকতে বলেছি। পাশাপাশি মার্চের বকেয়া বেতন যেসব কারখানা এখনও দেয়নি সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে আমরা সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার গত ১৩ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। মালিকদের অনুরোধে শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই পোশাক কারখানা লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়।’

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চালু রাখা এবং শ্রমিকদের যাতায়াতে প্রতিষ্ঠানকে গাড়ি সরবরাহ করতে বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ১৪ এপ্রিল থেকে বেশির ভাগ কারখানায় প্রায় চার গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে শ্রমিকদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এছাড়া কারখানার যাতায়াত, কর্মস্থলে শ্রমিকদের প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ কারখানায় তিন ফুট দূরত্বও মানা হচ্ছে না। কিছু কিছু কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে।

চিঠিতে ৬ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি:

এক. স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহনের ব্যবস্থা না করলে শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত যাতায়াত ভাতা ঘোষণা করতে হবে।

দুই. কর্মস্থলে শ্রমিকদের প্রবেশ-বের হওয়ার সময় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও কাজের স্থানে তিন ফুট দূরত্ব কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রয়োজনীয় পরিদর্শন বা মনিটরিং করতে হবে। কারখানাগুলোয় পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক ও নার্স সেবা প্রদান করছেন না এবং সব কারখানায় আইসোলেশন ব্যবস্থা করতে হবে।

তিন. কঠোর ‘লকডাউন’ চলাকালে যে সব শ্রমিক ঝুঁকি নিয়ে কারখানায় কাজ করছেন তাদের ঝুঁকি ভাতা দিতে হবে।

চার. পোশাক শ্রমিকদের জন্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রদান করতে হবে।

পাঁচ. এই মুহূর্তে কোনও কারখানা লে-অফ বা শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে না। এখনও কিছু কারখানা মার্চ মাসের মজুরি প্রদান করেনি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের নির্দেশ দিতে হবে।

ছয়. সব শ্রমিকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।