এ ‘ক্ষত’ সহজে সারবে না

‘আগুন আমাদের পরিবারকে বিভীষিকায় ফেলেছে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সবাই। এই যন্ত্রণা যেমন শারীরিক তেমনি মানসিকও।’ বলছিলেন আরমানিটোলার মুসা ম্যানসনের অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি থাকা সাখাওয়াত হোসেন।

রবিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে হাসপাতালের বেডে শুয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুসা ম্যানসনের ছয়তলায় প্রায় ২১ বছর ধরে আছি। শুক্রবারের আগুনে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো। সুস্থ হলেও মানসিক ক্ষত কখনও মুছবে না। এই বেদনা নিয়েই বাকি সময়টা পার করতে হবে।’

সাখাওয়াত বলেন, ‘এরমধ্যে আবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, বৃহস্পতিবারের মধ্যে বাসার মালামাল সরাতে হবে। এ যেন বোঝার ওপর শাকের আঁটি। পরিবারের সবাই হাসপাতালে ভর্তি। কে আমাদের জিনিসপত্র সরাবে?’

দগ্ধ একজন ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, ‘কেমিক্যালের গোডাউন উচ্ছেদের নামমাত্র তৎপরতা দেখেছি। পুরান ঢাকায় আগুন লাগলেই তোড়জোড় শুরু হয়। কিছু দিন না যেতেই অজানা কারণে সব থেমে যায়।’

ভবনের পাঁচতলার বাসিন্দা শাকির হোসেন আছেন সাখাওয়াতের পাশের বেডে। তিনি বলেন, ‘রবিবার সকালে আমার ভাই শাফায়েত মারা গেছে। আমরা এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি। বাবা-মাও ভর্তি আছেন। তারা একটু পর পর জ্ঞান হারাচ্ছেন। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। এই ক্ষত কখনোই সারবে না।’

শাকির বলেন, ‘চিকিৎসকরা যথেষ্ট সহায়তা করছেন। চিকিৎসার খরচ এখনও যতটুক সম্ভব নিজেরাই বহন করছি। কতদিন চিকিৎসাধীন থাকতে হবে তা জানি না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আমরা যেতে চাইলে নিজেদের জিম্মায় যেতে পারি। কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা। সারতে সময় লাগবে। তবে মা-বাবাকে নিয়ে চিন্তা বেশি। পরিবারের একজনকে তো হারিয়েছি। আর কাউকে হারাতে চাই না। এ ধরনের অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে কর্তৃপক্ষ এবার যেন কিছু করেন।’

চিকিৎসাধীন দগ্ধ রোগীরাহাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক ডাক্তার পার্থ শংকর পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আরমানিটোলার ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ ও আহত হয়ে ২১ জন ছিলেন। তার মধ্যে সাফায়েত নামের একজন আজ রবিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে আইসিইউতে মারা গেছেন। আরও চারজন ভেন্টিলেশনে আছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। পোস্ট অপারেটিভ এবং বেডে যারা রয়েছেন তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েচে। যাদের দগ্ধের পরিমাণ কম তাদের রিলিজ দেবো দুয়েক দিনের মধ্যে।’