এক তরমুজ যেভাবে ৫শ’ টাকা হয়

মৌসুমের শুরু থেকেই এবার তরমুজ দোকানিদের মুখে চওড়া হাসি। ইদানীং লাভ হচ্ছে বেশ। কীভাবে? উত্তর না দিয়ে আবারও চওড়া হাসি। কয়দিন যেতে না যেতেই ক্রেতাদের মুখে মুখে প্রশ্ন- তরমুজের কেন এত দাম? এক তরমুজ পাঁচশ’ টাকাও হয়ে যায়! মৌসুমি ফলের তো এমন দাম হওয়ার কথা নয়।

ক্রেতারা ফাঁকিটা ধরতে পারেননি শুরুতে। মাস খানেক পরে সবার খটকা লাগে- তরমুজ কেজিতে বিক্রি শুরু হলো কবে থেকে? আর এতেই এক লাফে দাম উঠে যাচ্ছে পাঁচশ’ টাকা। কৃষক কি একটা তরমুজ তার ক্ষেত থেকে নিদেনপক্ষে ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন? তা যদি হতো, তবে এই গরমেও কৃষকদের পৌষ মাস চলার কথা। অথচ তা হচ্ছে না। জানা গেলো, ক্ষেত থেকে তোলা তরমুজ এখনও শ’ হিসেবেই বিক্রি করছেন চাষিরা।

রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুরের টাউন হল, শান্তিনগরে সরেজমিন দেখা গেলো, তিন জায়গাতেই কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। তাহমিনা তড়িঘড়ি গাড়িতে বসেই তরমুজের দাম জানতে চান। ৭৫ টাকা কেজি শুনে ভ্রূ কুঁচকে বলেন, ওটা কত কেজি হবে। ছয় কেজির একটু বেশি বলায় সম্বিত ফিরে পান তাহমিনা। চিৎকার করে বলেন, ‘তরমুজ কেজিতে খেলাম কবে? এটা কী বলেন?’ দোকানি হেসে বললেন, ‘দিন বদলাইসে। এখন কেজিতেই।’

এমন পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে অনেকে ক্ষোভ ঝাড়ছেন। কেউ কেউ এই মৌসুমে তরমুজ বয়কটের কথাও বলেছেন। পটুয়াখালী ও বরিশালের বেশ কয়েক জায়গায় বিক্রেতাদের জরিমানা করার ঘটনাও ঘটেছে। তাদের দাবি, ‘এ অভিযান রাজধানীতেও হোক। ভোক্তাদের সঙ্গে এমন প্রহসন মেনে নেওয়া যায় না।’

উল্লেখ্য, তরমুজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সোমবার মোবাইল কোর্ট পটুয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে ১৪ ব্যবসায়ীকে জ‌রিমানা করেছে।

কীভাবে এক তরমুজ পাঁচশ’ টাকা?

চলতি সপ্তাহে খুচরা বাজারে এক কেজি তরমুজের দাম চলছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। ভালো মানের গুলো ৭০-৮০ টাকা। এতে ৬-৭ কেজির হলেই একটি তরমুজের জন্য ক্রেতার গুনতে হচ্ছে প্রায় পাঁচশ’ টাকা। দাম শুনে স্বয়ং চাষিও আঁতকে উঠবেন। কারণ, চাষের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, যে তরমুজ মানুষ ৩৫০-৪০০ টাকা দিয়ে কিনছেন, সেটার দাম হওয়া উচিত বড়জোর ১৫০ টাকা।

প্রতি তরমুজে কমপক্ষে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তরমুজ চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, তরমুজ যে কেজিতে বিক্রি হবে তা আমরাও ভাবিনি। গত বছর থেকে এই চল শুরু হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে পারছে মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

ঢাকার ব্যবসায়ী মনসুর আলী বলেন, কেউ যদি অসাধু কাজ করে তার দায় আমাদের সবার হবে কেন? তার দাবি, করোনা, পরিবহন খরচ, চাহিদা সব মিলিয়ে দাম বেশি। তাই বলে পাঁচশ’ হবে? এবার উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক অভিযোগ আসায় ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও বিষয়টি বিবেচনাধীন জানা গেছে।