ডিজিটাল উপকূল-২

খবর পেতে দিন গুনতে হয় না তাদের

বছর দুয়েক আগেও এ দ্বীপের মানুষকে খবর দেখতে বাজারের দোকানে রাত ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো টেলিভিশন দেখতে। ৫ মিনিটের খবর দেখতে দিতে হতো ৫-১০ টাকা। ছাপা কাগজের খবর পড়তে অপেক্ষা করতে হতো সপ্তাহ। সেই দ্বীপের চিত্র আমূল বদলেছে। সহজলভ্য ইন্টারনেট আর স্মার্ট ফোনের কল্যাণে মিলছে দেশ-দুনিয়ার সব খবর, মুহূর্তেই। বলছিলাম নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার কথা।

হাতিয়ায় এখন সবার হাতেই স্মার্ট ডিভাইস। খবর তো পাচ্ছেনই, বিদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথাও বলছেন দ্বীপবাসী।

ইন্টারনেটের কারণে হাতিয়ায় এখন পত্রিকার গ্রাহক কমেছে। হকারকে নদী পেরিয়ে পত্রিকা সংগ্রহ করতে হয় না। উপজেলা সদর থেকে ৫ থেকে ৭ দিনের ডাকযোগের পথ পাড়ি দিয়ে গ্রামে পত্রিকা পাঠানোর দিনও ফুরিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সাত লাখ মানুষের বাসস্থান হাতিয়ায় বই-ম্যাগাজিন গেলেও কাগুজে পত্রিকার গ্রাহক নেই বললেই চলে।

Digital coast Part 5 (5)দ্বীপবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্গম নদীপথ হওয়ায় রাজধানী থেকে হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডে দৈনিক পত্রিকা পৌঁছাতে একদিনেরও বেশি সময় লাগে। আর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকলে সময় লাগে আরও বেশি। স্বাভাবিক সময়ে দিনের পত্রিকা উপজেলা সদরে পৌঁছে সন্ধ্যায়। সেখান থেকে দ্বীপের অন্যান্য গ্রাম, ইউনিয়ন, বাজার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় ডাকযোগে। এতে লেগে যায় সপ্তাহখানেক।

কথা হয় দ্বীপ উপজেলার হকার আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সবার হাতে এখন স্মার্ট ফোন। একদিন আগের নিউজ কেউ পড়তে চায় না। গ্রাম এলাকার মানুষ তো পত্রিকা কেনাই বন্ধ করে দিয়েছে।

কথা হয় নিঝুম দ্বীপের শিক্ষক সামছুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পত্রিকার চেহারা যে কবে দেখেছি বলতে পারবো না। কিন্তু প্রতিদিন খবর দেখি। মোবাইল-ফেসবুকেই তো সব চলে আসে। প্রতিদিন কয়েকবার শীর্ষস্থানীয় অনলাইন ও পত্রিকাগুলোর ওয়েবসাইট দেখে নিলেই হয়।

শুধু হাতিয়া নয়, ভোলার মনপুরার ঢালচরের চিত্রও একই। এ চরেও সরেজমিন কোনও পত্রিকা পাওয়া গেলো না। কিন্তু চরের মানুষ সব খবর জানে। উপকূলের অন্যান্য এলাকায় শক্তিশালী মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সুবিধার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।

একই চিত্র চরফ্যাশনেও। এখানে পত্রিকা পৌঁছালেও সন্ধ্যা হয়ে যায়। সাগরে সতর্ক সংকেত থাকলে ওইদিনের পত্রিকা পড়া হয় না কারও।

জানতে চাইলে স্থানীয় সাংবাদিক শিপু ফরাজী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিদিন বিকাল ৩টার পর পত্রিকা আসে। কখনও আকাশ একটু খারাপ থাকলে আসে না। আমরা সকালে ফোনেই পত্রিকা দেখে ফেলি।’

তিনি বলেন, ‘এ উপজেলার অনেকের ঘরে এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আছে। ওয়াইফাই ব্যবহার করে সবাই। দুর্যোগ মুহূর্তেও ইন্টারনেট বন্ধ থাকে না।’

কক্সবাজারের মহেশখালীতেও কাগুজে পত্রিকা পৌঁছে অনেক দেরিতে। কোনও এলাকায় একেবারেই যায় না। এখানেও আছে থ্রিজি-ফোরজি সেবা।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে ইন্টারনেটের স্পিড ভালোই। পত্রিকা আসুক না আসুক, খবর সবাই ঠিকই পায়।’

Disital Cost Part 2 (2) (1)জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় তথ্য অফিসের পরিচালক জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার দুর্গম চরের মানুষও এখন ইন্টারনেটের সব সুবিধা পাচ্ছেন। দুর্যোগের বার্তা মুহূর্তে তারা ফেসবুকেই পায়। দুর্গম সাগরের মধ্য থেকেও ইন্টারনেটে কথা বলতে পারেন তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্গম এলাকাগুলোর মধ্যে পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, মনপুরা, চরফ্যাশনসহ কিছু এলাকা রয়েছে একেবারেই সাগর পাড়ে। ওইসব এলাকাতেও এখন ইন্টারনেট আছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্গম এলাকাগুলোতে অনেক কাজ হয়েছে। যে কারণে করোনাকালে আমাদের অফিসিয়াল কাজও সচল ছিল।’

হাতিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক দেশ রূপান্তরের হাতিয়া প্রতিনিধি মানিক মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বাড়িতে পত্রিকা পৌঁছে দুই দিন পর। কিন্তু আমি তো সেটার জন্য বসে থাকি না। আমার রুটিন হলো ঘুম থেকে উঠে আগে ওয়েবসাইটে খবর পড়া।’