হাসপাতাল থেকে করোনা রোগী কীভাবে পালায়, কেন পালায়?

যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে আবারও ভারতফেরত এক করোনা রোগী পালিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (১৩ মে) নিজেকে রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়া এই রোগীকে ফিরিয়ে আনতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। এর আগে গত ২৩ ও ২৪ এপ্রিল এ হাসপাতাল থেকে ভারতফেরত সাতজনসহ মোট ১০ জন করোনা রোগী পালিয়ে যান।

কেন ভারত থেকে আসা এই করোনা রোগীরা পালানোর চেষ্টা করছে জানতে চাইলে রোগী ও রোগীর স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালের আচরণে মনে হয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে। রোগীরা বড় অপরাধী। শুনেছি এই রোগের চিকিৎসাই নাই। স্বজনদের ছাড়া হাসপাতালে এভাবে রাখা হলে আগেই মরে যাওয়ার ভয় পেয়ে পালানোর চেষ্টা করেন।

হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনও সমস্যা আছে কিনা প্রশ্নে যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা শেখ আবু শাহীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রথমবার রোগী পালানোর পর পুলিশ এবং হাসপাতালের পক্ষ থেকে দুই কিংবা তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এরপরও কেন একই ঘটনা ঘটলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রথম দফায় পালিয়ে যাওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরা দাবি করেন, তারা কেউ হাসপাতালে ভর্তিই  হননি। আবার কেউ বলেন, হাসপাতাল থেকেই কোনও সহকারী তাদের বলেছে, ‘চলে যেতে চাইলে চলে যেতে পারেন’। এক পরিবারে কোভিড উপসর্গ থাকলেও তারা হাসপাতালে নানা শঙ্কায় থাকতে চাননি বলে না বলে চলে গেছেন।

বৃহস্পতিবারের ঘটনায় যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আরিফ আহমেদ হাসপাতাল থেকে করোনা রোগী পালানোর কথা স্বীকার করে বলেন, বিকাল সোয়া ৫টার দিকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে ওই রোগী বের হয়ে যান। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ জিজ্ঞেস করলে তিনি রোগী পরিচয় গোপন করে নিজেকে রোগীর স্বজন দাবি করে চলে যান।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী এতই শিথিল যে করোনা রোগী বের হয়ে গেলেও টের পাওয়া যায় না প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ( হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যশোরের লোকাল প্রশাসন এর ব্যবস্থা নিচ্ছে। রোগীকে ফেরত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার কন্টাক্ট ট্রেসিং এর চেষ্টা করা হবে। আমরা হাসপাতালকে বলেছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতি থাকলে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা শেখ আবু শাহীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রোগীকে ধরার চেষ্টা চলছে, এটা দেখছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। রোগীর বিষয়ে তারা এখনও আমাদের কিছু জানায়নি। তার মানে তাকে এখনও পাওয়া যায়নি। কিন্তু হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফলতির কারণেই বারবার রোগী পালাচ্ছে কিনা বা এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগে রোগী পালানোর পর পুলিশ এবং হাসপাতালের পক্ষ থেকে দুই কিংবা তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তারপরও এই রোগী পালিয়েছে। জেলা প্রশাসন,  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে আমরা করণীয় নির্ধারণ করবো।