সৌদি থেকে দেশে ফেরার যাত্রীদের ভোগান্তিও বাড়িয়েছে বিমান

৬০০ কিলোমিটার দূর থেকে সৌদি আরবের কিং খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে আরিফুল ইসলাম বাবু জানতে পারেন ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বুধবার (১৯ মে) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে (স্থানীয় সময়) বিজি ৪০৪০ ফ্লাইটে তার বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। এজন্য ভোর ৩টায় বিমানবন্দরে গিয়ে হাজির হন। বিমান ফ্লাইট বাতিল করায় বেকায়দায় পড়েন আরিফুল। বাধ্য হয়ে বিমানের আশা ছেড়ে ১ হাজার রিয়াল খরচ করে কাতার এয়ারওয়েজের টিকিটে দেশের পথে রওনা দিয়েছেন তিনি।

আরিফুল ইসলাম বাবু একা নন, সৌদি থেকে যারা বাংলাদেশে আসতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিটি কেটেছেন তারা সবাই পড়েছেন বিপত্তিতে। যাদের আর্থিক সামর্থ্য ভালো তারা অন্য এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে দেশে চলতে আসবেন। কিন্তু যাদের সেই সামর্থ্য নেই তারা জানেন না কবে দেশে ফিরতে পারবেন। কর্মস্থলে থেকে ছুটি নেওয়ার পর এমন পরিস্থিতি পড়ায় ক্ষুব্ধ সৌদি প্রবাসী কর্মীরা।

একই ফ্লাইটের আরেক যাত্রী আমিনুল ইসলাম বলেন, নিজের দেশের এয়ারলাইন্স তাই বিমানের টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু তারা সব সময় ভোগান্তির মধ্যে ফেলে। দেশে আসার জন্য কতগুলো টাকা খরচ করে করোনা টেস্ট করলাম। ২ দিন ধরে যে কী কষ্ট করতে হয়েছে। বিমানের কারণে সব এলোমেলো হয়ে গেলো।

জানা গেছে, ২০ মে থেকে সৌদি আরব যাত্রায় নতুন বিধিনিষেধ মানতে হবে। এসব বিধিনিষেধ পালনের প্রস্তুতি নিতে না পেরে ফ্লাইট বন্ধ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। যার ফলে বিমানের টিকিট কাটা বাংলাদেশ ও সৌদি আরবে থাকা যাত্রীরা পড়েছেন সংকটে। কবে নাগাদ আবার ফ্লাইট চালু হবে, বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীদের কী হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রবাসী কর্মীরা। তবে এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কোনও বক্তব্য জানা যায়নি।

জানা গেছে, রিয়াদ, দাম্মাম ও জেদ্দা- এই তিন গন্তব্যে সপ্তাহে ১৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করছিল বিমান। আগে মক্কা এবং মদিনায় বিমানের ফ্লাইট থাকলেও, করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। এয়ারলাইন্সটির ওয়েব সাইটে ফ্লাইট শিডিউল চেক করে দেখা গেছে, সৌদি আরবের রিয়াদ, দাম্মাম ও জেদ্দায় কোন ফ্লাইট নেই। ফলে যারা বিমানের টিকিট কেটেছিলেন তাদের যাত্রা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক কর্মকর্তা জানান, যাত্রীদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিং এয়ারলাইন্সকে নিশ্চিত করতে বলেছে সৌদির জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশন। কিন্তু এখনও বিমানের পক্ষ থেকে হোটেলে সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। ফলে হোটেল বুকিং ছাড়া যাত্রী নেওয়াও যাবে না। এ কারণে ফ্লাইট বন্ধ রাখা। তবে হোটেলগুলোর সঙ্গে চুক্তি ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে দ্রুত ফ্লাইট চালু করা যাবে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সৌদি আরব। দেশটির সরকারের বিধি নিষেধ ১০ মে সৌদি আরবের জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশন বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যারা করোনার ভ্যাকসিন নেননি, তারা সৌদি আরবে প্রবেশ করলে ৭ দিন হোটেলে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। হোটেলের খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে। করোনার সংক্রমণ রোধে সৌদি সরকারের এ নিয়ম ২০ মে থেকে কার্যকর হবে। এছাড়া, সৌদিগামী সকলের মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স থাকতে হবে। যাতে করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসা ব্যয় ইনস্যুরেন্সের আওতায় বহন করা যায়। যাত্রীদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিং এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে করার নির্দেশনাও দিয়েছে জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশন।