বাজেটের ফ্যাশন যখন ব্রিফকেস

দেশে প্রতি বছরই জাতীয় বাজেট পেশের আগে হাতে কালো রঙয়ের ব্রিফকেস নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রীরা। এটা অনেকটাই রীতিতে পরিণত হয়েছে। তবে দেশ-বিদেশে এই প্রথা নতুন নয়। জানা যায়, ১৮ দশকের দিকে যুক্তরাজ্যে প্রথম এই রীতি চালু হয়। সে সময় লাল স্যুটকেসে নিয়ে আসা নথি থেকে বাজেট পেশ করতেন অর্থমন্ত্রীরা।

যদিও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কিছুটা ব্যতিক্রম। লাল নয়, বরং চকোলেট রঙয়ের ব্রিফকেস হাতে নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সংসদ ভবনে প্রবেশ করেন তিনি। হাসি মুখে ব্রিফকেস হাতে নিয়ে গাড়ি থেকে নামেন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের জন্য সংসদে প্রবেশ করেন। এসময় সবাইকে হাত তুলে সালাম এবং অভিবাদন জানান।

গত বছর ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশকালেও অর্থমন্ত্রী কালো রঙয়ের একটি ব্যাগ নিয়ে সংসদে এসেছিলেন। সেই ব্যাগটিও ছিল কিছুটা ব্রিফকেসের আদলেই তৈরি।

বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেই অধিবেশনে যোগদানের জন্য বের হন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতবছর অর্থমন্ত্রী কোটপ্যান্ট পরে বাজেট পেশ করলেও এবার তার পরনে ছিল পাজামা-পাঞ্জবির ওপরে মুজিব কোট।  আর হাতে ছিল সেই চিরচেনা ব্রিফকেস,  যার রঙ চকোলেট।

জানা যায়, বাজেটের সময়  ব্রিফকেস ব্যবহারের এই রীতি শুরু হয় ১৮ দশক থেকে। প্রথম শুরু হয় যুক্তরাজ্যে। সেখানে বাজেটপ্রধানকে  ব্রিফকেস খুলে বাজেট পেশ করতে বলা হতো। ১৮৬০ সালে ব্রিটেনের বাজেটপ্রধান উইলিয়াম ই গ্ল্যাডস্টোন লাল একটি স্যুটকেসে করে বাজেট সংক্রান্ত নথি নিয়ে আসেন। সেই স্যুটকেসের ওপরে সোনা দিয়ে রানির মুখের আদলের ছাপ দেওয়া ছিল। ওই একই স্যুটকেস সেদেশের বহু সরকারের আমলেই ব্যবহার করা হয়।

প্রথা অনুযায়ী, ‘লাল ব্রিফকেস’ হাতে বাজেট পেশ করতে সংসদে ঢোকেন অর্থ মন্ত্রীরা। তবে এই রহস্যময় ব্রিফকেসের রঙ সব সময় লাল ছিল না, অনেক সময়ই তা বদলেছে। তবে রঙ যা–ই হোক না কেন, এই ব্রিফকেসকে বাজেটের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়, যা বাজেটের ফ্যাশন বলা চলে।

বাজেট শব্দটির উৎপত্তিও এই ব্রিফকেসকেই নির্দেশ করে। বাজেট শব্দটি এসেছে পুরনো ফরাসি শব্দ ব্যুজেট (বোগেট) থেকে। ব্যুজেটের অর্থ হলো থলে বা ব্যাগ। অতীতে থলেতে ভরে দেশের আয়-ব্যয়ের হিসাব আইনসভা বা সংসদে আনা হতো বলে একে ‘বাজেট’ নামে অভিহিত করা হয়।

এ বিষয়ে লেখা আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খানের বইতে। তার ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’ শীর্ষক লেখায় বলা হয়েছে, ‘শিল্পবিপ্লবের পর ইংল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক বড় হয়ে যায়। বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবগুলো শুধু একটা মানিব্যাগে সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছিল না। মানিব্যাগের জায়গায় তাই আসে ব্রিফকেস। বইটিতে বাজেট প্রস্তাবের দিন ব্রিফকেস ব্যবহারের আরেকটি কারণ উল্লেখ করা হয়।  সেটি হচ্ছে, বাজেটে কোন কর বাড়বে বা কোন কর কমবে, তার গোপনীয়তা বজায় রাখা অপরিহার্য।  ব্রিফকেসের ভেতরে থাকা বাজেটের কোনও তথ্য জেনে গেলে ব্যবসায়ীরা রাতারাতি তার ব্যবহার করতে পারেন।  তাই প্রস্তাবগুলো গোপন রাখার স্বার্থে ব্রিফকেসে করে আনা হয়।