‘বাজেটে আমলাদের খাতির করা হয়েছে’

‘প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট সাধারণ মানুষের জন্য নয়। এই বাজেটে আমলাদের খাতির করা হয়েছে’ বলে  মতামত দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনেরা।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুরে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের বীর উত্তম মেজর হায়দার মিলনায়তনে ‘সচেতন নাগরিকদের দৃষ্টিতে ২০২১-২০২২ জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মতামত তুলে ধরেন তারা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘প্রথম কথা বাজেটের তিনিট দিক— বরাদ্দ, ক্ষমতাসীন দলের অর্থনৈতিক কৌশল, চলমান বাস্তবতার সঠিক প্রতিফলন। কৌশলের পেছনে অর্থনৈতিক দর্শনও কাজ করে। ক্ষমতাসীন দলের অর্থনীতির কৌশল থাকে চুঁইয়ে পড়া অর্থনীতির দিকে। অর্থমন্ত্রী এটার ওপরেই গুরুত্ব দিয়েছেন।’

তিনি আরও  বলেন,‘শিল্পকারখানা, ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নতি হলে সকল স্তরের মানুষ আস্তে আস্তে সুবিধা পাবেন। এটাই এই নীতির মূল দর্শন। জিডিপির বৃদ্ধি চুঁইয়ে পড়া অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটার অসাড়তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে সেটা অনেকাংশেই মেলে না। আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা। সেখানে কত বরাদ্দ দেওয়া হলো, তা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। এটাই সত্য বাংলাদেশের জনগণ রেজিলিয়েন্ট।’

অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী ব্যর্থ বাজেট দিয়েছেন। উনি বড় শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক উনার শ্রেণির খুব বেশি মানুষ নেই। ক্যাপাসিটির তুলনায় আমরা ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিকে ৯ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা খাতের অবস্থা আপনারা জানেন। ছেলে-মেয়েদের যে ঘাটতি হয়ে গেছে, এটা লাঘবে বরাদ্দ দেওয়া উচিত ছিল। চীন থেকে আমরা ১০ ডলারে ভ্যাকসিন কিনেছি। ভ্যাকসিনেশনের জন্য অনেক পরিমাণ বরাদ্দ দরকার। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। এই ক্রিটিক্যাল সময়ে অর্থ খাতে, স্বাস্থ্য খাতে অযোগ্য ও বিলো অ্যাভারেজ মানুষকে দায়িত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অপরাধ করেছেন।’

গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাজেট হওয়া উচিত নাগরিকদের জন্য। আমি বাজেটটি দেখার চেষ্টা করেছি, অর্থমন্ত্রীর শ্রেণি চরিত্রের আলোকে। বাজেটের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার পেশা ও শ্রেণির প্রভাব পড়েছে। বাজেটে দুর্নীতিকে বহাল রাখার ফাঁক রয়ে গেছে।’

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘এখনকার সংসদ প্রশ্নবিদ্ধ এবং সংসদ সদস্যরা জনগণের দাবি ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেযন না। প্রশ্ন আসে, বিশাল বাজেটে বড় অঙ্কের টাকা কীভাবে ব্যয় হবে। এক্ষেত্রেও জনগণের সামনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বালাই থাকবে না।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাজেট হচ্ছে সরকারের আর্থিক নীতি। শুধু বরাদ্দ দিয়ে এটা বোঝা যায় না। যদি নীতিটাই ভুল হয়, তাহলে বরাদ্দ বেড়ে লাভ নেই। বরং ক্ষতি। এখন সরকার স্বীকারই করতে চায় না যে, আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল। সব দেশই তা দিচ্ছে। ভ্যাকসিনেশনে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল। তা না-হলে অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে।’