‘যাত্রীদের ধারণা সিএনজি চালকরা জুলুম করে, কিন্তু মূলকথা কেউ জানে না’

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সিএনজি চালকরা অসহায় জীবনযাপন করছে উল্লেখ করে তাদের নিবন্ধন বাস্তবায়ন করাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিএনজি অটোরিকশা চালক সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনের নেতারা বলছেন, যাত্রীদের ধারণা সিএনজি চালকরা যাত্রীদের উপর জুলুম করে। কিন্তু মূলকথা হলো আমরা চালকরা যে কতটা অসহায়, সে কথা কখনো কেউ জানেই না, শোনেও না।

শুক্রবার (১৮ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পরিষদটি আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে পরিষদের আহ্বায়ক শেখ হানিফ বলেন, আমরা সিএনজি চালকরা কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেও অন্ন, বস্ত্র, ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার খরচ চালানোর পর মাস শেষে ঘরভাড়াটাও একসাথে দেওয়া দায় হয়ে ওঠে। পরিবার-পরিজন অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা পর্যন্ত করতে পারি না। এদিকে রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশার মালিক-প্রশাসন ও চাঁদাবাজ দালালদের অত্যাচার তো আছেই। এখন সেসবের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। করোনাকালেও আগের মতোই অনৈতিকভাবে মাসে দুবার জমা বৃদ্ধি করছে মালিকরা। এখন আমাদের প্রতিদিন এক হাজার-৬০০ টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে যাত্রা শুরু করতে হয়।

ঢাকায় মাত্র এক হাজার সিএনজি মালিকের কাছে প্রায় এক লাখ সিএনজি চালক ও এক কোটি যাত্রী জিম্মি হয়ে পড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, যাত্রীদের ধারণা সিএনজি চালকরা যাত্রীদের উপর জুলুম করে। কিন্তু আমরা যে চালকরা কতটা অসহায় সে কথা কখনো কেউ জানেই না, শোনেও না। আমরা চালকরা নিয়োগপত্র না থাকায় বছরে তিন থেকে চারবার বেকার হই।
এসময় তিনি সিএনজি অটোরিকশা চালকদের নামে থাকা বিভিন্ন সংগঠনেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এরা (সংগঠনের নেতাকর্মীরা) মূলত মালিকপক্ষের দালালি করে নিজেদের আখের গোছানো ছাড়া আর কিছুই বোঝে না।

সমাবেশে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ২০০৭ সালের ঘোষণা অনুযায়ী অটোরিকশা চালকদের নিবন্ধন বাস্তবায়ন করাসহ ১০ দফা দাবি পড়ে শোনান তিনি। সংগঠনের অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে, সিএনজি অটোরিকশা চালককে নাম মাত্র সরল সুদে সিএনজি অটোরিকশা কেনার জন্য দীর্ঘ মেয়াদি ব্যাংক ঋণ দিতে হবে। ঋণের ৫০ শতাংশ টাকা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে; চালক ছাড়া ব্যক্তি মালিকানায় সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন (ব্লু-বুক) প্রদান করা চলবে না এবং ঢাকা মেট্রোতে সিএনজি অটোরিকশার দৈনিক জমা ৫০০ টাকা ও অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা করতে হবে।

সমাবেশে আরও দাবি করা হয়, ‘ইয়েস পার্কিং’ সুবিধা না দেওয়া পর্যন্ত ‘নো পার্কিং’ মামলা ও মিটার মামলা দেওয়া যাবে না; বর্তমান সিএনজি মালিকরা চালকদের নিয়োগ পত্র দিতে হবে; নতুন লাইসেন্স প্রদান ও পুরাতন লাইসেন্স নবায়ন করতে সহজ শর্তে ও অল্প অর্থে প্রদান করতে হবে; মহাসড়কে সিএনজি চলাচলের অনুমতি দিতে হবে; সড়কের খানাখন্দ রিপিয়ারিং করে জেব্রা ক্রসিং, স্পিড ব্রেকার ও রোড ডিভাইডার এবং শাখা সড়কে (এপ্রোচ) অ্যারো চিহ্ন দৃশ্যমান রঙে রঙিন করতে হবে এবং দেশের সকল সেতুতে সিএনজির জন্য টোল ৫০ শতাংশ করতে হবে।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক আমিনুল ইসলাম, ফোরকান, এ. আর জাহাঙ্গীর প্রমুখ।