জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীর অবদান স্বীকৃতি পায়নি’

মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান থাকলেও ইতিহাসে তা স্বীকৃতি পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিক। তারা মনে করেন, পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান অনেক বেশি যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কখনও স্বীকৃতি পায়নি।

শনিবার (২৬ জুন) বিকালে শহীদজননী জাহানারা ইমামের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নারী সমাজের অবদান’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা উঠে আসে আলোচনায়।

স্মারক বক্তৃতায় সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নারীর জীবন অধ্যয়নের একটি বড় দিক। এই যুদ্ধে নারীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারী তার সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করেছিলেন স্বাধীনতার মতো একটি বড় অর্জনে। পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ ছিল তার জীবন বাজি রাখার ঘটনা।’

সেলিনা হোসেন প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীকে মূলধারায় স্থাপন না করার ফলে নারীর প্রকৃত ইতিহাস যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে যে নারী গৌরবগাঁথা রচনা করেছিলেন তা ধর্ষিত এবং নির্যাতিত নারীর ভূমিকায় অদৃশ্য হয়ে আছে। প্রকৃত অবদান খুঁজে নারীকে মূলধারায় না আনার আরও একটি কারণ নিম্নবর্গের নারীরাই ব্যাপকভাবে এ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।’

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান কোনও অংশে কম নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান অনেক বেশি, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কখনও স্বীকৃতি পায়নি। এর কারণ হচ্ছে সামন্ততান্ত্রিক ও ধর্মীয় মৌলবাদী ধ্যানধারণা, যা মানুষের মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।

শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রবাসে যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠন করেছেন তাদের নামও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় সংযুক্ত করছে। এক্ষেত্রে সবার আগে কবি সুফিয়া কামাল ও শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মতো যে সব সাহসী নারীরা শত্রু কবলিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় যুক্ত করার জন্য নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি।’

আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মালেকা খান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শাহনাজ সুমি, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, অধ্যাপিকা উর্মিলা রায় ও অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটি’র সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। ওয়েবিনারে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান’ শীর্ষক ‘জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা’ প্রদান করেন কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন।

স্মৃতিপদক প্রদান

এই অনুষ্ঠানে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনকে ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক’ প্রদান করা হয়। এ বছর ২০২১ সালে ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী মালেকা খান এবং সংগঠন হিসেবে ‘বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ’-কে জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ২০২০ সালে ব্যক্তি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট বাউল গবেষক অধ্যাপক শক্তিনাথ ঝা এবং সংগঠন হিসেবে ‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’-কে জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক প্রদান করা হয়।

এর আগে, শনিবার সকাল ৮টায় মিরপুরে শহীদজননী জাহানারা ইমামের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা।