শনাক্ত না হলে হস্তান্তর হবে না মরদেহ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহেতদের মরদেহ শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত হস্তান্তর করা হবে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুরুন নবী।  শুক্রবার (৯ জুলাই) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

সহকারী কমিশনার বলেন, ‘আমরা ৪৮টি মৃতদেহ পেয়েছি। পুলিশ তাদের সুরতহাল তৈরি করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগকে দিয়েছে। শুক্রবার রাত সোয়া ৯টা থেকে মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত চলছে। পাশাপাশি মরদেহ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। নমুনাগুলো সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে সংরক্ষণ করা হবে। সিআইডির ফরেনসিক টিম মৃত ব্যক্তিদের দাবিদারের সঙ্গে ম্যাচিং করবে। এজন্য তাদের (মরদেহের) স্বজনদের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত ১৯ জনানের মরদেহের বিপরীতে ২৬ জনের   নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডি।’

সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুরুন নবী বলেন, ‘যারা দাবিদার রয়েছেন, তাদেরকে এসে সিআইডির কাছে নমুনা দিতে হবে। মরদেহ দেখে যেহেতু নিহত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে মরদেহ হস্তান্তর যাচ্ছে না। ফলে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।’

এত মরদেহ কীভাবে কোথায় রাখবেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের কাছে  কোনও সিন্ধান্ত আসেনি।’

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাহলে উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এখনও পাইনি।’

ঢামেক মর্গ সূত্রে জানা গেছে, মর্গের চারটি মরচুয়ারি  সচল রয়েছে। এখানে  মাত্র চারটি  মরদেহ রাখার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিগুলোতে আগে থেকেই অন্য মরদেহ আছে। ফলে রূপগঞ্জ থেকে আসা মরদেহগুলো আপাতত একটি কক্ষের ফ্লোরে জমায়েত রাখা হবে।

প্রসঙ্গত, রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় কারখানার ছয়তলা ভবনটিতে তখন প্রায় চার শতাধিক কর্মী কাজ করছিলেন। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়ক তৈরি করার প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে।

প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুরে কারখানার ভেতর থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে, আগুনে পুড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। সব মিলে এ পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। কারখানায় আগুনের ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

আরও পড়ুন:

ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে ৪৯ লাশ 

আগুনে পোড়া লাশের সারি, স্বজনদের আহাজারি

দীর্ঘ সময়েও আগুন নেভাতে না পারায় স্থানীয়দের হামলা

যে কারণে দীর্ঘ সময়েও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জুস ফ্যাক্টরির আগুন

১৭ ঘণ্টায় নেভেনি জুস কারখানার আগুন, নিহত ৩

কান্না চোখে স্বজনের খোঁজ (ফটো স্টোরি)

নারায়ণগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি