সেই ধোঁয়া আর আর্তচিৎকারের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন আহত শ্রমিকেরা

‘নিচের দিকে আগুন, উপরে ধোঁয়া। চারদিক অন্ধকার, কোনও দিশা না পেয়ে লাফিয়ে পড়লাম। এরপর আর কিছুই মনে নেই।’ 

কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের আগুনের ঘটনায় ঐ ফ্যাক্টরির ক্লিনার ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মাজেদা বেগম (২৮)। তিনি ঐ ফ্যাক্টরির ২য় তলায় কাজ করতেন। বেঁচে আছেন যে, সে কথা এখনও বিশ্বাস হয় না তার। কতদিন চোখের সামনে এই দুঃসহ স্মৃতি বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে কে জানে! 

মাজেদা সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার লোকমান মিয়ার মেয়ে। তার মা জোবেদা বেগম বলেন, মাজেদার তিন ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। স্বামী নেই। চার সন্তান নিয়ে মাজেদা মায়ের কাছে থাকেন। তার বৃদ্ধ বাবা সংসার চালাতে পারতো না বলে মাজেদা গ্রামে আশপাশের মানুষের বাসায় ছুটা কাজ করে সংসার চলতো। কিন্তু এতেও কষ্ট হতো। গত কয়েক মাস আগে রূপগঞ্জে যায়। সেখানে দেড় মাস আগে ঐ ফ্যাক্টরিতে ঝাড়ুদারের কাজ নেয় মাজেদা। থাকতো ঐ এলাকায়। সেদিনের ঘটনায় মাজেদা তার ডান হাতে, মুখে ও পায়ে আঘাত পায়। চিকিৎসারা জানিয়েছেন, তার অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো। তবে দাঁতের সমস্যা রয়েছে। 

মাজেদার বাবা লোকমান বলেন, আহতের সংবাদ শুনে এসেছি। মাজেদাকে গুরুতর আহত অবস্থায় লোকজন হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। আমরা খুঁজতে খুঁজতে হাসপাতালে এসে মেয়েকে পাই। 

একই ফ্যাক্টরির ২য় তলায় টোস্ট বিস্কুট তৈরির কাজ কাজ করতেন আহত আমেনা বেগম (৩২)। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই গ্রামের আজাদ মিয়ার স্ত্রী। বর্তমানে ভুলতার গাউছিয়া এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন। স্বামী পেশায় মাছ বিক্রেতা। রনি ও প্রিয়াঙ্কা নামে দুই সন্তান রয়েছে। 

তিনি বলেন, তারা মা ছেলে মেয়ে- তিনজনই ঐ ফ্যাক্টরিতে গত ২-৩ বছর যাবত চাকরি করেন। মেয়ে ছেলে দুজনেরই ডিউটি ছিল রাতে। সে সময়ে তিনি আর তার ভাতিজা কাজ করছিলেন। আগুন লাগার পরপর ভাতিজা রায়হান তাকে সেখানকার এক হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করায়।

আমেনার ডান পা ও হাত ভেঙে গেছে। মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আহত আমেনার বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা বলেন, ঘটনার সময়ে আগুন দেখে দৌড়ে নামার চেষ্টাকালে হুড়োহুড়ির সময়ে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন। তার কোনও জ্ঞান ছিলো না। সেখান থেকে লোকজন স্থানীয় হাসপাতাল নিয়ে যান। আমরা সেখান থেকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসি। 

দ্বিতীয় তলার কর্মী আহত আরেকজন হালিমা আক্তার (১৩)। নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার সাইদুল ইসলামের মেয়ে হালিমা। তারা তিন বোন, এক ভাই। তার মা সাহানা গার্মেন্টস কর্মী, বাবা সাইদুল একটি সুতা তৈরির কারখানায় কাজ করেন। বর্তমানে গাউছিয়া এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন তারা। হালিমা তার বড় বোন সাদিয়া (১৬) দুজনেই ঐ ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো। বাবা সাইদুল জানায়, মেয়েটি গ্রামের বাড়িতে প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করতো। করোনার সময়ে তেমন কোনও পড়াশোনা হয় না। তাই চার মাস আগে আমাদের কাছে এনে ঐ ফ্যাক্টরিতে তার বড় বোনের সঙ্গে কাজে লাগিয়ে দিই। ঘটনার সময়ে সে দ্বিতীয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়। 

তিনি বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- তার অবস্থা এখন ভালো রয়েছে। বাকিটা বাসায় রেখে ওষুধ খাওয়ালে আস্তে আস্তে পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে। মঙ্গলবার তাকে ছেড়ে দেবেন। 

হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানিয়েছেন, আমাদের এখানে রূপগঞ্জের ঘটনায় তিনজন ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা আগের থেকে অনেকটা ভালো রয়েছে।