পাইলটদের বেতন কাটছে বিমান, আন্দোলনে বন্ধ হতে পারে ফ্লাইট

মহামারির লোকসান কাটাতে গতবছর থেকেই কর্মীদের বেতন কাটার পাশাপাশি ওভারটাইম সুবিধা বাতিল করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সম্প্রতি বিভিন্ন পদের কর্মীদের বেতন কাটা বন্ধের ঘোষণা দিলেও, পাইলটদের বেতন কাটা চলমান রাখার ঘোষণা দেয় বিমান। এতে ক্ষুব্ধ বিমানের পাইলটরা। দাবি আদায়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। আন্দোলন শুরু হলে বন্ধ হতে পারে কয়েকটি রুটের ফ্লাইট।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রশাসন বিভাগ ১৩ জুলাই এক আদেশে  জানায়, ২৮ জুন অনুষ্ঠিত বিমান পরিচালনা পর্ষদের ২৫৬তম সভায় সিদ্ধান্ত হয় বেতনক্রম-৬ ও তার ওপরে থাকা কর্মকর্তাদের বেতন কর্তনের হার হ্রাস করা হয়েছে। সে আদেশে বলা হয়, বেতনক্রম ৬ হতে ৮ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের জুলাই থেকে আর বেতন টাকা হবে না (আগে ১০ শতাংশ হারে কাটা হতো)। বেতনক্রম ৯ থেকে তার উপরের কর্মকর্তাদেরও জুলাই থেকে বেতন না কাটার সিদ্ধান্ত হয়।

তবে পাইলটদের বেতন কাটা বন্ধ হয়নি। আদেশে বলা হয়, ককপিট ক্রু যাদের চাকরির বয়স ৫ বছর, শুধু তাদের জুলাই থেকে বেতন কাটা হবে না (আগে কাটতো ১৫ শতাংশ)। ৫-১০ বছর যাদের চাকরি বয়স তাদের বেতন জুলাই থেকে ৫ শতাংশ হারে কাটা হবে (আগে ছিল ২০ শতাংশ) ১০ বছরের বেশি যে পাইলটদের চাকরির বয়স তাদের জুলাই থেকে ২৫ শতাংশ বেতন কাটা হবে (আগে গ্রস স্যালারি থেকে ৪০ শতাংশ কাটা হতো)।

এ আদেশে ক্ষুব্ধ পাইলটরা। তারা বলছেন, বিমানের কর্মকর্তাদের অনেকে হোম অফিসে করছেন। কিন্তু বিমানবন্দরে যারা ডিউটি করেছেন- পাইলট, কেবিন ক্রু, এরা বেশি ঝুঁকিতে আছেন।

তারা আরও বলেন, গতবছরের মার্চ থেকে বন্ধ হতে থাকে বিভিন্ন রুটের ফ্লাইট। কিন্তু চিকিৎসা সামগ্রী পরিবহন এবং বাংলাদেশিদের বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান। এ সময় পাইলটদের বেতন কমানো হলেও একটানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করেছেন তারা। অথচ যারা সম্মুখসারিতে কাজ করেছে তাদেরই বেতন কাটা বন্ধ হলো না।

এ আদেশের পর বিমানের পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) কয়েকদফা বৈঠক করে। সর্বশেষ ১৪ জুলাই বৈঠক করে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বিমান কর্তৃপক্ষের এই আদেশের প্রতিবাদে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানাবে বাপার নির্বাহী কমিটি। ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বিমানের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর মতো বেতন সমন্বয়ের অনুরোধ করবে সংগঠনটি। এর মধ্যে সমন্বয় না হলে পাইলটরা শুধু বিমান ও বাপার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ফ্লাইট পরিচালনা করবে।

বিমান ও বাপার চুক্তিতে একজন পাইলটকে বাধ্যতামূলকভাবে নির্ধারিত বিশ্রাম ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা রয়েছে। একজন পাইলট কত ঘণ্টা একটানা ডিউটি করবেন তাও চুক্তিতে রয়েছে।

আন্দোলন হলে তার প্রভাব কেমন হবে জানতে চাইলে একজন পাইলট বলেন, ‘যদি পাইলটরা চুক্তির বাইরে ফ্লাইট না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তবে বিমানের আবুধাবি, দোহা, দাম্মাম ও দুবাই ফ্লাইট বন্ধ হতে পারে। বর্তমানে এসব গন্তব্যে পাইলটদের বিমানবন্দরের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারা ফ্লাইট নিয়ে আবার ব্যাক করেন।  কিন্তু চুক্তি অনুসারে পাইলটকে বিশ্রামের সময় দিতে হবে। যেহেতু এ ফ্লাইটে তারা বিশ্রামের সুযোগ পাবেন না, তাই ডিউটি করতেও বাধ্য নন।’ 

বাপার পক্ষ থেকে বিমানে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংগঠনটির সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সবার বেতন কাটা হলে আমরাও মেনে নিতাম। কিন্তু সবাই পাবে, শুধু পাইলটদের কাটবে, এ বৈষম্য কেন?’

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘করোনার উৎ্পত্তিস্থল উহানে ফ্লাইট পরিচালনা থেকে শুরু করে একটানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি, ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা শাটল ফ্লাইট, ছুটির দিনে, মাসিক নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরেও ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন পাইলটরা। পুরো পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলে নিজের জীবনের চিন্তা না করে কর্তব্য পালন করেছেন। চুক্তিপত্রের বাইরে গিয়েও যাকে যে কর্তব্য দেওয়া হয়েছে তিনি তা পালন করেছেন। কী কারণে শুধু পাইলটদের বেতন কাটতে হবে?’

হতাশা ও ক্ষুব্ধ মনোভাব নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা এয়ারলাইন্সের নিরাপত্তার জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান। তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলন করলেও চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ ও ভ্যাকসিন পরিবহনের যে কোনও ফ্লাইটে আমরা ডিউটি করবো।’

এ বিষয়ে বিমানের কর্মকর্তারা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।