উড়োজাহাজ নিলাম ঠেকাতে ইউনাইটেড এয়ারের দৌড়ঝাঁপ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ সরাতে দীর্ঘদিন ধরে বারাবর চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। একদিকে বকেয়া পাওনা, অন্যদিকে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো জায়গা দখল করে বিমানবন্দরে ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে উড়োজাহাজগুলো সরাতে নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেবিচক। বেবিচকের নিলামের তৎপরতা শুরু হওয়ার পর তা ঠেকাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে ইউনাইটেড এয়ার।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, শাহজালালে পরিত্যক্ত ১২টি উড়োজাহাজের মধ্যে আটটিই বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইন্সে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের। এ ছাড়াও জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি এবং অ্যাভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ রয়েছে। পার্কিং চার্জ না দিয়েই দুই থেকে আট বছর ধরে পড়ে থাকা এসব অকেজো উড়োজাহাজ বিমানবন্দরের জায়গা দখল করে আছে।

বেবিচকের নিলামের প্রস্তুতির খবরে ইউনাইটেড এয়ার নড়েচড়ে বসেছে। ইউনাইটেড এয়ারের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান চিঠি দিয়ে উড়াজাহাজগুলো ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছেন। একই সঙ্গে বেবিচকের কর্মকর্তাদের গণমাধ্যমে নিলাম নিয়ে মতামত না দেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন।

শাহজালালের সবচেয়ে বেশি পরিত্যক্ত উড়োজাহাজের মালিক ইউনাইটেড এয়ার ২০০৫ সালে বেবিচকের অনুমোদন পায়। পরে ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ফ্লাইট অপারেশন শুরু করে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোনও ঘোষণা না দিয়েই ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত এয়ারলাইন্সটি। আর ২০২১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের বকেয়া পাওনা দাঁড়ায় ৩১ হাজার ১৭৩ কোটি ২২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা।

অকেজো উড়োজাহাজগুলোকে সরিয়ে নিতে দীর্ঘদিন ধরেই এয়ারলাইন্সগুলোকে একের পর এক চিঠি দিয়ে আসছে বেবিচক। কিন্তু এয়ারলাইন্সগুলোর সাড়া না পাওয়ায় বিপত্তিতে পড়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দর থেকে সহসাই সরাতে না পারলেও কার্গো ভিলেজের সামনে জায়গা খালি করতে অন্যত্র সরানো হয়েছে এসব উড়োজাহাজ। বাতিল করা হয়েছে রেজিস্ট্রেশন। সবশেষ উপায়ন্তর না পেয়ে পরিত্যাক্ত উড়োজাহাজ নিলামে তোলার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে বেবিচক।

এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর গত ১৪ জুলাই বেবিচক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন ইউনাইটেড এয়ারের পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরে রক্ষিত উড়োজাহাজ নিলামের খবরে আমরা উৎকণ্ঠিত, কেননা ওখানে রক্ষিত উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে ৮টি ইউনাইটেড এয়ারের। এ উড়োজাহাজের প্রকৃত মালিক দেশের প্রায় দেড় লাখ শেয়ার হোল্ডার।

শাহজালালে ইউনাইটেডের আটটি উড়োজাহাজ আছে, সেগুলো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়ারও প্রস্তাব জানানো হয় চিঠিতে। বলা হয়, যথাযথ পরিদর্শন, টেকনিক্যাল অডিট ও বেবিচকের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা উড়োজাহাজগুলোর ভবিষৎ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং শিগগির স্থানান্তরে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো। উড়োজাহাজগুলো এখনও ৫০ ভাগ উড্ডয়নের সমক্ষমতা আছে বলে আমরা অবগত হয়েছি। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ সাপেক্ষে উড্ডয়ন যোগ্য করার বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারবো বলে আশা করছি।

এছাড়া মধ্য ভারতের ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ এয়ারপোর্টে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সটির একটি বিমান দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর সরানোর উদ্যোগ না নেওয়ায় ২০১৮ সালে আগস্টে সেটিকে রানওয়ের পার্কিং লট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। 

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাজী ওয়াহিদুল আলম জানিয়েছেন, এই উড়োজাহাজটিকেও ভারতে স্ক্র্যাপ হিসেবে নিলামে তোলার প্রস্তুতি চলছিল। তারা যোগাযোগ করে অনেক কষ্টে ছয় মাসের সময় নিয়েছেন। তবে তহবিল না থাকায় এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে সেখানে কাউকে পাঠানো যাচ্ছে না, ফলে সেটার অবস্থাও জানতে পারছেন না তারা। পাকিস্তানেও এয়ারলাইন্সটির একটি উড়োজাহাজ আটকা পড়ে আছে বলেও ওই সাক্ষাৎকারে জানান ওয়াহিদুল আলম।

ইউনাইটেড এয়ারের চিঠি প্রাপ্তির কথা জানালেও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন
জুনের মধ্যে সরবে বিমানবন্দরের পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ
পরিত্যক্ত উড়োজাহাজের জঞ্জাল সরাতে নতুন কৌশল
ভারতের বিমানবন্দরে ঠেলে সরানো হলো বাংলাদেশের বিকল বিমান