হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রফতানি কার্গো ভিলেজের সামনে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে কয়েকটি এয়ারলাইন্সের ১২টি পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ। একদিকে এসব এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা আদায় করতে পারছে না বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। অন্যদিকে, পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো না সরানোয় কার্গো ভিলেজের সামনের জায়গা ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। বারবার চিঠি দিয়েও এসব এয়ারলাইন্সের সাড়া না পাওয়ায় বিপত্তিতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দর থেকে সহসাই সরাতে না পারলেও কার্গো ভিলেজের সামনে জায়গা খালি করতে অন্যত্র সরানো হচ্ছে এসব উড়োজাহাজ। নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কৌশলগত পদক্ষেপ।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের জন্য বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে উত্তর দিকে নতুন করে ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বিমানবন্দরের মূল পার্কিং জোনে আমদানি-রফতানির মালামাল উড়োজাহাজে উঠানো-নামানো হয়। এতে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজগুলোকে পার্কিংয়ের জায়গা দিতে সংকটে পড়তে হচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। অন্যদিকে বিমানবন্দরের উত্তর দিকে রফতানি কার্গো ভিলেজের সামনে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো সরাতে পারলে কমপক্ষে ছয়টি কার্গো উড়োজাহাজকে পার্কিংয়ের জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে। তবে বছরের পর বছর বেবিচক চিঠি দিলেও পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো সরাতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলো। এসব উড়োজাহাজের রেজিস্ট্রেশন কার্যকর থাকায় আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে নিলামে বিক্রি করতেও পারছে না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ সরাতে কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে বেবিচক। সাময়িকভাবে উড়োজাহাজগুলোকে রফতানি কার্গো ভিলেজের সামনে থেকে সরিয়ে আরও উত্তর দিকে বে-তে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে উড়োজাহাজগুলোর রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হলে ডি-রেজিস্ট্রেশন করা হবে। ইতোমধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আটটি ও জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজের ডি-রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। বাকি উড়োজাহাজগুলোর ডি-রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে উড়োজাহাজগুলো সরাতে আইনি নোটিশ দেওয়া হবে। এরমধ্যে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স সরিয়ে না নিলে সেগুলো নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হবে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, পরিত্যক্ত ১২টি উড়োজাহাজের বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইন্সের। এরমধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আটটি, জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি, অ্যাভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ রয়েছে।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের বকেয়া পাওনা ১৯০ কোটি ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৫ টাকা। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বকেয়া পাওনা ২৩৬ কোটি ৯ লাখ ৩২ হাজার ৭০ টাকা, জিএমজি এয়ারলাইন্সের কাছে বকেয়া পাওনা ৩২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯ হাজার ৫৪৫ টাকা।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোনও ঘোষণা না দিয়েই ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় ইউনাইটেড এয়ার। ২০০৫ সালে বেবিচকের অনুমোদন পাওয়ার পর ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ফ্লাইট অপারেশন শুরু করেছিল এ এয়ারলাইন্সটি। বেবিচক দেশের বিমানবন্দরগুলো থেকে এয়ারলাইন্সটির বিমান সরানোর জন্য একাধিকবার নোটিশ করলেও কোনও ধরনের উদ্যোগ নেয়নি এয়ারলাইন্সটি। এছাড়া মধ্য ভারতের ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ এয়ারপোর্টে এয়ারলাইন্সটির একটি বিমান দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর সরানোর উদ্যোগ না নেওয়ায় ২০১৮ সালে আগস্টে সেটিকে রানওয়ের পার্কিংলট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
২০১২ সালে বন্ধ হয়ে যায় জিএমজি এয়ারলাইন্স। এই এয়ারলাইন্সটি বিমানবন্দর থেকে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারির কারণ দেখিয়ে সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। যদিও দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়ায় এয়ারলাইন্সটি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না। এয়ারলাইন্সটির কর্মীদের তিন মাসের বিনা বেতনে ছুটির চিঠি দেওয়া হলেও তিন মাস শেষ হয়ে বর্তমানে পাঁচ মাস চলছে। রিজেন্ট এয়ারওয়েজ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর।
এ প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে থেকে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ সরাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন রফতানি কার্গো ভিলেজের সামনে থেকে অন্যত্র সরানো হচ্ছে। পরে আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে একেবারে বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে ফেলা হবে।’