রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামি'আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা ছেড়ে দিয়েছেন মাদ্রাসাটির মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হক। আজ সোমবার (১৯ জুলাই) সকাল পৌনে ৯টার দিকে তিনি উপস্থিত শিক্ষক-ছাত্রদের নিয়ে মাদ্রাসার মূলফটকে তালা দিয়ে বেরিয়ে যান। পরে মাদ্রাসার চাবি সরকার স্বীকৃত ইসলামি শিক্ষা বোর্ড আল হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে বেলা ১১টার দিকে মাদ্রাসাটি ‘অবৈধ দখল মুক্ত’ করতে যায় ঢাকা জেলা প্রশাসন।
বেলা ১২টার দিকে পুলিশের উপস্থিতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাদ্রাসার ভেতরে প্রবেশ করেন। তবে এ অভিযানের ছবি তুলতে বাধা দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাংলা ট্রিবিউনের ফটো সাংবাদিকের ক্যামেরা ধরেও টান দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।
গত ২৯ জুন বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মাদ্রাসা ওয়াকফ এস্টেট এর সম্পত্তি অনুমোদিত কমিটির কাছে বুঝিয়ে দিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়। এদিকে মাদ্রাসাটির হস্তান্তরের গুঞ্জনে মাদ্রাসা এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে গত কয়েকদিন ধরেই।
সোমবার সকালে মাদ্রাসা থেকে ফেসবুক লাইভে আসেন মাওলানা মাহফুজুল হক। মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে কথা আসছে- আমাদের এ প্রতিষ্ঠান ছাড়তে হবে, এ ভবন আমাদের ছাড়তে হবে। আমরা লক্ষ্য করছিলাম, কাছে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কোনও নোটিশ আসেনি। আমাদের দেশের শীর্ষ আলেমরা এ বিষয়টি নিয়ে কোনও পরামর্শও করছেন না।
রবিবার (১৮ জুলাই) আল হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মুফতি রুহুল আমিন, হেফাজত মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদী, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মুফতি এনামুল হকসহ কয়েকজন এ বিষয়ে পরামর্শ করেছেন বলেও জানান মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, আমরা জেনেছি তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মন্ত্রী তাদের আশ্বাসও দিয়েছেন। এতে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি, দীর্ঘদিন ধরের চলে আসা এই অবস্থার একটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাবে। রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে বার্তা আসে, আমরা যেন মাদ্রাসার চাবি আল হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানে কাছে বুঝিয়ে দেই। আমরা অল্প সময়ের মধ্যে মাদ্রাসার সকল গেটে তালা দিয়ে শীর্ষ আলেমদের কাছে চাবি হস্তান্তর করবো।
সূত্র জানায়, মাদ্রাসায় উচ্ছেদ অভিযানে খবর পেয়ে আগেই মাদ্রাসা ছেড়েছেন তারা। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসার আগেই না সরলে তাদের মুখোমুখি হতে হতো মাওলানা মাহফুজুল হককে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তিনি আগেই মাদ্রাসা ছেড়েছেন। একই সঙ্গে আগেভাগে বেরিয়ে গিয়ে নিজেদের ‘ভিকটিম’ হিসেবে উপস্থাপন করারও কৌশল নিয়েছেন বলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
আর সরকার স্বীকৃত ইসলামি শিক্ষা বোর্ড আল হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসান রাহমানিয়া মাদ্রাসা সংক্রান্ত সরকারি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে অসম্মতি জানিয়েছেন। মাদ্রাসাটি ওয়াকফ হওয়ায় আদালত ও ওয়াকফ প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বাইরে কোনও কিছু করতে রাজি নন বলেও জানান তিনি।