মাদক ভয়ংকর-৫

কারবারিরা লেনদেন করছে ভার্চুয়াল মুদ্রায়

মাদকাসক্তের সংখ্যা ও বাজার বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে কারবারিরা। তবু থেমে নেই নতুন মাদকের আমদানি। এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকলো পঞ্চম ও শেষ পর্ব।

মাদক কেনাবেচার বড় বাজার এখন অনলাইন। বাংলাদেশেও দেদার চলছে এ পদ্ধতি। সম্প্রতি এমনই প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বাংলাদেশে ৬০ হাজার কোটি টাকার মাদক বাজার রয়েছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। যে কারণে আন্তর্জাতিক চক্রের নজর এখানে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জানিয়েছেন, ‘তারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট তৎপর।’

বিটকয়েনে অর্থপাচার
গত ৬ জুলাই রাতে রাজধানীর হাতিরঝিলে অভিযান চালিয়ে ‘ম্যাজিক মাশরুম’ ও বিদেশি মদসহ দুই যুবককে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ম্যাজিক মাশরুমের পাঁচটি বার উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া নাগিব হাসান অর্নব (২৫) থাকতো কানাডায়। সে এই মাদক বাংলাদেশে নিয়ে আসে। ‘চকোলেট কেক’ হিসেবে কুরিয়ারের মাধ্যমে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে এ মাদক বাংলাদেশে আনে সে। মাদকের টাকা পরিশোধ করতো দেশে অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রা বিটকয়েনে।

র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা এখন বেশ চালাক। তাদের লেনদেনগুলো ধরার সুযোগ কম। নতুন যেসব মাদক পাওয়া গেছে সেগুলো আনা হতো বিদেশ থেকে। বিট কয়েন, পেপালসহ অনলাইন নানা পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে চলতো লেনদেন।’

মাদকের বাজার ৬০ হাজার কোটি টাকা
বাংলাদেশে মাদকের বাজার কত তার সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। তবে মাদকসেবী ও মাদক উদ্ধারের পরিসংখ্যান দিয়ে তা অনুমান করা যায়। দেশের ৭৬ লাখ মাদকসেবী গড়ে দিনে ৩৫০-৪০০ টাকার মাদক সেবন করে। এ ছাড়াও বছরজুড়ে উদ্ধারকৃত মোট মাদকের ৯ গুণ বাজারে আছে বলে বিবেচনা করা হয়।

গবেষক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদক যা ধরা পড়ে বাজারে তার ৯ গুণ বেশি আছে বলে ধরা হয়। এটাই আন্তর্জাতিক প্যারামিটার।’

এ ছাড়াও পাইকারি ও খুচরা বাজারে ৫-৬ ধাপে মাদক বিক্রি হওয়ার পর সেবীদের হাতে পৌঁছায়। এসব কিছু মাথায় রেখে হিসাব করে বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন দাবি করে বাংলাদেশের মাদকের বাজার প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার।

২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন র‌্যাবের মহাপরিচালক এবং বর্তমানে পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, ‘দেশে ৮০ লাখ মাদকসেবী রয়েছে। তারা প্রতিদিন প্রায় ২৫০ কোটি টাকা মাদকের পেছনে খরচ করে।’

মানস-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৬০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় মাদক কেনাবেচায়। বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা চিকিৎসা, পুর্নবাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খরচ, সচেতনতামূলক কার্যক্রম এসবের ব্যয়।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বার্ষিক যে রিপোর্ট প্রকাশ করে তাতে দেখা গেছে, ২০২০ সালে অধিদফতর, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩১৭টি ইয়াবা বড়ি, ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৭৭ বোতল ফেনসিডিল, ৫০ হাজার ৭৮ কেজি গাঁজা, প্রায় ৭২ কেজি আফিম এবং প্রায় ৪ কেজি কোকেন উদ্ধার করে।

ওই বছর এসব ঘটনায় ৮৫ হাজার ৭১৮টি মামলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।