উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে বন্যা হচ্ছে বলা হলেও পরিবেশবাদী ও বিশেষজ্ঞরা একে বন্যা বলতে নারাজ। তারা এ পরিস্থিতিকে বলছেন জলাবদ্ধতা। তাদের মতে, উজানে ভারী বৃষ্টি আগেও ছিল। তখন তা বঙ্গোপসাগরে সহজেই নেমে যেতো। এখন নানা প্রতিবন্ধকতায় পানি বের হতে পারছে না বলেই বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, “বন্যা হচ্ছে বিশ্বাসই করি না। ১৯৮৭, ’৮৮, ’৯৮ সালে বন্যা হয়েছিল। এর আগে ’৫৬, ’৫৭ সালেও বন্যা হয়েছিল। ’৭৪-এর পর থেকে বন্যার প্রকোপ কমতে শুরু করে। গণমাধ্যমে যেসব ছবি আসছে সেগুলো মূলত নদীর পাড়ের চরের ছবি। প্রতি দুই-তিন বছর পর নদী পূর্ণ হবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।”
তিনি আরও বলেন, ‘আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচলে ভারী বৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক বৃষ্টিতেই আমাদের চর ও প্লাবনভূমির নিচু অংশ ডুবে যাওয়ার কথা। যেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে, বাঁধ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে, সেখানে বাঁধ কার্যকর থাকলে বন্যা হওয়ার কথা নয়। যেখানে প্লাবনভূমিতে বাঁধ নেই- যেমন সৈয়দপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর। এসব স্থান ডুবে যাওয়ার কথা। নদীর মাঝের চরাঞ্চলও ডোবার কথা। এটাই স্বাভাবিক। ভবিষ্যতে এই পানির উচ্চতা আরও বাড়তে পারে।’
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উজানের বৃষ্টি সবসময় ছিল, থাকবে। জলবায়ুর পরিবর্তনে বৃষ্টির সময় বদলেছে, পরিমাণ ততটা না বদলালেও গত ১০০ বছরের বৃষ্টিপাতের ইতিহাস দেখলে দেখা যায়; বৃষ্টিপাতের সময়ে প্রায় এক থেকে দুই মাস তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে দেশে ষড়ঋতুর জায়গায় চার ঋতু হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত পানি প্রাকৃতিক প্রবাহ নষ্ট হওয়াতেই বন্যা হচ্ছে। ফসল উৎপাদনের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর কথা ভেবে বাঁধ, স্লুইস গেট, পোল্ডার ইত্যাদি দিয়ে পানিকে আটকাচ্ছি এবং সঙ্গে সঙ্গে ভাটিতে তা বের হওয়ার জায়গাগুলো বন্ধ করে ফেলছি। এ কারণে একে জলাবদ্ধতা বলা যায়। ঢাকার নদী, খাল ও প্লাবন অঞ্চল দখল হয়ে যাওয়ায় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলনস্থলের এত পানি যাবে কোথায়?’