বার্ষিক ৭২ শতাংশ সারচার্জ বাতিল চায় দেশি এয়ারলাইন্সগুলো

বর্তমানে দেশি  এয়ারলাইন্সগুলোকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) আরোপিত  মাসিক ৬ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হয়। বকেয়া পাওনার ওপর এই সারচার্জ বছরে ৭২ শতাংশ। এই সারচার্জ মাত্রাতিরিক্ত দাবি করে বাতিলের দাবি জানিয়েছে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(এওএবি)। সংগঠনটির দাবি, যৌক্তিকে হারে সারচার্জ নির্ধারণ করা হোক।

জানা গেছে, সারচার্জ কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে আনার দাবি জানিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর  বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে এওএবি। সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল মফিজুর রহমান সাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বেবিচক তার বিভিন্ন বকেয়া পাওনার ওপর মাসিক ৬ শতাংশ হারে সারচার্জ  চক্রবৃদ্ধি হারে আরোপ করে।  এই মাত্রাতিরিক্ত সারচার্জের কারণে অনেক এয়ারলাইন্স দেনা শোধ করতে পারছে না। দেনার চাপে দেউলিয়া অবস্থায় নিপতিত হয়। সময়মতো পাওনা পরিশোধ না করতে পারলে সারচার্জ দিয়ে পাওনা পরিশোধের নিয়ম অনেক দেশেই রয়েছে। তবে সেই সারচার্জের তুলনায় দেশে বেবিচকের হার বহুগুণ বেশি।

সংগঠনটি বলছে,  বিশ্বের যেকোনো অর্থনৈতিক বিপর্যয়, জ্বালানি মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা মহামারির কারণে এভিয়েশন ব্যবসা প্রথমেই বিরাট ঝুঁকিতে পড়ে। চলমান করোনা  মহামারিতে এ অবস্থা আরও ঘনীভূত হচ্ছে, যার কারণে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাত অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। এয়ারলাইন্সগুলো তাদের পাওনা সময়মতো পরিশোধ করতে পারছে না, এর ওপর অতিরিক্ত সারচার্জ পরিস্থিতি আরও সংকটপূর্ণ করে তুলছে।

বাংলাদেশে সারচার্জ ৭২ শতাংশ । অন্যদিকে ভারতে ১২-১৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১২শতাংশ, ওমানে ১০ শতাংশ, পাকিস্তানে ২ শতাংশ।   ফলে বকেয়া সারচার্জের ঝুঁকিতে পড়ে গেলে  সেই অবস্থা থেকে ফিরে আসার উপায় থাকে না। দেনা পরিশোধ সম্ভব হয় না। যার উদাহরণ জিএমজি, ইউনাইটেড ও রিজেন্ট এয়ার।

 

সংগঠনটি তাদের চিঠিতে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে,  কোনও এয়ারলাইন্স সময়মতো বিল পরিশোধ করতে না পারলে বকেয়া বিলের ওপর সারচার্জ দিতে হবে, এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই। তবে সেই সারচার্জ হার যৌক্তিক ও পরিশোধযোগ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার অনধিক  ৯ শতাংশ করেছে  অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে। কিন্তু  বেবিচকের ৭২ শতাংশ সারচার্জ  অযৌক্তিক, ব্যবসাবান্ধব নীতির পরিপন্থী।

এওএবি বলছে, বাংলাদেশ বিমানের কাছে বেবিচকের মোট পাওনার পরিমাণ ৪ হাজার ৩১৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ হচ্ছে ৯২০ কোটি ১৭ লাখ টাকা, বাকি ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকাই হচ্ছে সারচার্জ ও অন্যান্য। বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি এয়ারলাইন্সের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৬৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ হচ্ছে ৫৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, বাকি ৩১১ কোটি ৩০ লাখ টাকাই হচ্ছে সারচার্জ ও অন্যান্য। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ হচ্ছে ৫৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, বাকি ২৯৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকাই হচ্ছে সারচার্জ ও অন্যান্য এবং রিজেন্ট এয়ারের কাছে বেবিচকের পাওনা ২৮৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ হচ্ছে ১৩৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা, বাকি ১৪৭ কোটি ২০ লাখ টাকাই হচ্ছে সারচার্জ ও অন্যান্য।

সংগঠনটি সারচার্জ মাসিক ১ শতাংশ হারে বার্ষিক ১২ শতাংশ নির্ধারণ করার অনুরোধ জানায়।