‘স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দিলে দখলকারীদের দমন সম্ভব নয়’

মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ক্ষমতাহীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। নদী কমিশনকে পরিপূর্ণ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা না করলে নদী দখলকারীদের দমন করা সম্ভব নয়। নদীগুলো রক্ষা করে এর প্রবাহ নিশ্চিত করাই— নদী দিবসের অঙ্গীকার।

রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শহীদ শেখ কামাল মিলনায়তনে মুজিব শতবর্ষ ও বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর নদী ও পরিবেশ ভাবনা এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কামরুন নাহার আহমেদ, কমিশনের ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক ইকরামুল হক ও বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মুনির হোসেন বক্তব্য দেন।

সভায় তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। ‘বঙ্গবন্ধুর নদী ভাবনা ও বাংলাদেশের নদীসমূহের দখল, দূষণ ও নাব্য সংকট: প্রেক্ষিত ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্প, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’, ‘বঙ্গবন্ধুর নদী ও পরিবেশ ভাবনা এবং আমাদের করণীয়’ এবং ‘সুস্থ নদী ও মৎস্যসম্পদের সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধগুলো উপস্থাপন করেন যথাক্রমে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ স্পেশালিস্ট মনির হোসেন চৌধুরী, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্স সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ক্ষমতাহীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। নদী কমিশনকে পরিপূর্ণ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা না করলে নদী দখলকারীদের দমন করা সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘নদী দখল ইস্যুতে আমরা শুধু প্রেসক্রিপশন করার ক্ষমতা রাখি, ওষুধ প্রয়োগের ক্ষমতার জন্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হতে হয়।’ দেশের নদী বাঁচাতে হলে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীন কমিশনের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নের তাগিদ দেন তিনি।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের শিল্প শহর গড়ে উঠেছে নদীর ওপর ভিত্তি করে, অথচ এই শিল্প-কলকারখানাগুলো নদীকে ধ্বংস করছে। বাংলাদেশের নদী না বাঁচলে কৃষি বাঁচবে না, আর কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। তাই দেশের নদীগুলো বাঁচানোর কার্যকর উদ্যোগ দরকার। তারা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে অনেক নদীতে ব্লক ফেলে নদীর ইকোসিস্টেম নষ্ট করা হচ্ছে। নদীদূষণের কারণে বাংলাদেশ থেকে অনেক দেশি মাছ হারিয়ে গেছে। প্রতিটি নদী নিয়ে আলাদা আলাদা পরিকল্পনা করা গেলে এ দেশের নদীগুলো বাঁচানো সম্ভব। নদীমাতৃক বাংলাদেশের খেতাবকে অটুট রাখা সম্ভব।