আল নাহিয়ান ট্রাস্ট্রে দ্রুত নির্বাহী পরিচালক নিয়োগের সুপারিশ

শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ট্রাস্টে (বাংলাদেশ) নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ দিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটি দ্রুতকম সময়ের মধ্যে নির্বাহী পরিচালক নিয়োগে জনপ্রশাসন  মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিতে বলেছে। অবশ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে বলে বৈঠককে জানিয়েছে।

রবিবার (১৭ অক্টাবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে দীর্ঘদিন নির্বাহী পরিচালক ছিলেন না। এখানে অনেক কাজ হয়েছে যেগুলো একটু ফিশি। এখন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, দ্রুত নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। সেজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিতে বলেছি।’

মেনন আরও বলেন, ‘আমরা একটি সংসদীয় উপ-কমিটি গঠন করেছিলাম। তারা তদন্ত করে যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। পরের বৈঠকেও এ সংক্রান্ত তথ্যাদি দিতে বলা হয়েছে।’

কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, নির্বাহী পরিচালক নিয়োগে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

২০১২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন কেবিএম ওমর ফারুক চৌধুরী। অবসরে যাওয়ার পরেও মৌখিক আদেশে গত ৩ মে পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পরে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়। বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গিয়াস উদ্দিন মোগলকে সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

১৯৮৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সময় এতিম শিশুদের কল্যাণে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করলে ওই বছরের ২২ জুন গঠন করা হয় আল নাহিয়ান ট্রাস্ট, যার দেখভালের দায়িত্বে আছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

শুরুতে আরব আমিরাত এই ট্রাস্টে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়েছিল। পরে সরাসরি ঠিকাদার নিয়োগ করে বাংলাদেশে ট্রাস্টের অধীনে একমাত্র আয়ের উৎস বনানীর আবাসিক ফ্ল্যাট ও শপিং কমপ্লেক্সের দোকানগুলো নির্মাণ করে দেয়।

দুই দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি দেয় বাংলাদেশ সরকার, অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিচালনা খরচ দেয় আরব আমিরাত সরকার। অথচ এ পর্যন্ত কত অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে, তার কোনও তথ্য এ প্রতিষ্ঠানে নেই।

২০১৯ সালে ট্রাস্টের সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের একটি উপ-কমিটি গঠন করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। গত বছর তদন্ত প্রতিবেদন স্থায়ী কমিটিতে জমা দেয় উপ-কমিটি। রবিবার উপ-কমিটির বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক করে স্থায়ী কমিটি।

কমিটি নাহিয়ান ট্রাস্টের বনানী আবাসিক ভবনের ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সের জায়গায় সরকারিভাবে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করে।

সংসদীয় উপ-কমিটি ট্রাস্টের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন শতভাগ বাড়ানোর সুপারিশ করে।

ওই সুপারিশ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় জানায়, ট্রাস্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে প্রায় চার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এ অবস্থায় শতভাগ বেতন দিতে হলে যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন হবে, তার একটি আর্থিক বিশ্লেষণ ট্রাস্টের পরের সভায় দেওয়া হবে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নাহিয়ান ট্রাস্টের বিগত ১০ বছরের অডিট রিপোর্ট স্থায়ী কমিটির পরের সভায় উপস্থাপনের এবং অডিট রিপোর্টে কোনও আপত্তি না পাওয়া গেলে নতুন করে সরকারি বা উপযুক্ত অডিট ফার্মকে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ অডিট করানোর সুপারিশ করা হয়।

সংসদীয় কমিটির নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৯ সালের পর দীর্ঘদিন ট্রাস্টের কোনও অডিট করা হয়নি। ট্রাস্টের কাছে বেশ কয়েক দফায় তাগিদ দিয়েও তহবিল ও সম্পদের পরিমাণ, আয়-ব্যয়ের হিসাব সম্পর্কে স্বচ্ছ কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।

২০০৫-০৬ অর্থবছরের পর ট্রাস্টের আর কোনও নিরীক্ষা প্রতিবেদন নেই। পরের বছরগুলোতে নিরীক্ষা প্রতিবেদন চলমান বলে কমিটিকে দেখানো হয়েছে। প্রায় ১০ বছর কেন অডিট করা হয়নি, সে বিষয়ে কোনও সদুত্তর পায়নি কমিটি।

তবে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপ-কমিটির তদন্ত চলাকালে নিরীক্ষা কাজ চলছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত অডিট করা হয়েছে।

রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সাগুফতা ইয়াসমিন, আরমা দত্ত এবং শবনম জাহান অংশ নেন। বিশেষ আমন্ত্রণে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বৈঠকে যোগ দেন।