হাওর সংরক্ষণে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সরকার

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কমিয়ে এনে হাওর রক্ষায় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এ লক্ষ্যে হাওর এলাকার জনগণকে সংগঠিত করে গ্রাম সংরক্ষণ দল গঠন করে দলগুলোর সদস্যদের মাধ্যমে সেখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশ-জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের ভবিষ্যত: তারুণ্যের মুখোমুখি নীতিনির্ধারক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা।

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, হাওর এলাকায় জলজ বন সৃজন করা হয়েছে এবং সংরক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিল-খাল পুনঃখননের মাধ্যমে জলাভূমির অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রবল ঢেউয়ের আঘাত থেকে হাওর এলাকার বসতবাড়ি ও সম্পদ রক্ষার জন্য হাকালুকি হাওরে সাবমার্জিবল বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধ বরাবর সবুজ বেষ্টনী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত প্রশমনে স্থানীয় কৃষকদের সেচ সুবিধায় সৌর শক্তিৎচালিত সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয়মূলক কার্যক্রমের জন্য ক্ষুদ্র মূলধন অনুদান দেওয়া হয়েছে। বিকল্প আয়মূলক কাজের জন্য প্রকল্প হতে সরাসরি উপকরণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য বিভিন্নমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার টাংগুয়ার হাওর ও মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি হাওরকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। টাংগুয়ার হাওরকে ২০ জানুয়ারি ২০০০ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় এবং পৃথিবীর ১০৩১তম রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়। এ এলাকায় প্রাকৃতিক বন ও গাছপালা কর্তন বা আহরণ; সব ধরনের শিকার ও বন্যপ্রাণী হত্যা; ঝিনুক, কোরাল, কচ্ছপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী ধরা বা সংগ্রহ; প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধবংসকারী যাবতীয় কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট/পরিবর্তন করতে পারে এমন সব কাজ; মাটি, পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণকারী শিল্প বা প্রতিষ্ঠান স্থাপন; মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতিকারক যে কোনও প্রকার কার্যাবলী; নদী-জলাশয়-লেক-জলাভূমিতে বসতবাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পয়ঃপ্রণালীসৃষ্ট বর্জ্য ও তরল বর্জ্য নির্গমন এবং কঠিন বর্জ্য অপসারণ; যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল বা অন্য কোনও পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যে কোনও খনিজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সুষ্ঠুভাবে এ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকাগুলো ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ জারি করা হয়েছে। বিধিমালা বাস্তবায়নে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটি জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন সমন্বয় কমিটি এবং গ্রাম সংরক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে। হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম এসব কমিটির মাধ্যমে সরকার বাস্তবায়ন করছে।

মন্ত্রী বলেন, শুধু উন্নত বিশ্বের দিকে না তাকিয়ে থেকে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সরকার বিশদ পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে ২০২১ অর্থবছর পর্যন্ত তিন হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এই তহবিলের অর্থে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি দফতর, সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮০০টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। গত সাত বছরে জলবায়ু সংক্রান্ত ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। যা ১২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে অভিযোজন কৌশল ও করণীয় নির্ধারণকল্পে ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান (ন্যাপ) প্রণয়ন করা হচ্ছে। উক্ত ন্যাপ প্রণয়নে দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ে পরামর্শমূলক সভা করা হচ্ছে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় করণীয় নির্ধারণে যুব সমাজকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, সরকার বছরে সাত কোটির অধিক গাছ লাগাচ্ছে। তিনি সবাইকে অধিক পরিমাণে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমেই পরিবেশ সংরক্ষণে সফল হবে সরকার।