শিশু অধিকারের ক্ষেত্রে ২০২১ সালের চিত্র ছিল হতাশজনক

শিশু অধিকারের ক্ষেত্রে ২০২১ সালের চিত্র ‘হতাশজনক’ ছিল বলে মনে করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২১: আসকের পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি।

এতে বলা হয়, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, বলাকার, অনলাইনে যৌন হয়রানিসহ শিশুর প্রতি নানা সহিংসতার ঘটনা অব্যাহত থেকেছে বছরজুড়ে। আসক তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের হিসাবমতে, ২০২১ সালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পরে হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয় মোট ৫৯৬ শিশু।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে নিহত শিশুর সংখ্যা ছিল ৫৮৯। এছাড়া ২০২১ সালে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ১ হাজার ৪২৬ শিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ৭৭৪ শিশু, ধর্ষণ চেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয় ১৮৫ শিশু এবং বলাৎকারের শিকার হয়েছে ৭৮ ছেলে। 

উদাহরণ তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১ এপ্রিল কক্সবাজার সদরে এক ছেলে শিশু (১২) বলাৎকারের শিকার হয়। এ ঘটনায় শিশুটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ১ মে বাগেরহাটের চিতলমারীতে ইউপি সদস্যের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ষষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী। ধর্ষণের কারণে মানসিক বিপর্যস্ত ওই স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

২৩ এপ্রিল পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ১২ বছর বয়সী এক ছিন্নমূল শিশুকে (১২) অমানুষিক নির্যাতন করে স্থানীয় প্রভাবশালী সাইফুল ইসলাম। নির্যাতনের কারণে শিশুটির মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থান থেতলে যায় এবং শিশুটি গুরুতর আহত হয়।

অন্যদিকে করোনার সময় থেকে বাড়তে থাকা বাল্যবিবাহ এ বছরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এ বিষয়ে গত ২৭ জুন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজের একটি মন্তব্য তুলে ধরা হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘অল্প বয়সের মেয়েরা প্রেম করে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করায় বাল্য বিয়ে বেড়ে যাচ্ছে’। প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্যবিবাহ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে যখন মেয়েরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে তখন আবার তাদেরই দোষারোপ করা অত্যন্ত অবিবেচনাপ্রসূত এবং দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছে বিভিন্ন নারী ও মানবাধিকার সংগঠন।

একই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে ৪৫ নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পরে মারা গেছেন তিন নারী। অন্যদিকে এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন ২৩ নারী।