৫০ বছরেও বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি সুপ্রিম কোর্ট বার

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করা শহীদ আইনজীবীদের যথাযথ মূল্যায়ন চেয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ দেশ বিজয়ের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করলেও অধরা রয়ে গেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে (বার) নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশা পূরণে এখনও পূর্ণতা পায়নি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আইনজীবীদের পূর্ণাঙ্গ নামফলক।

১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধনপূর্বক ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে ভাষণে নিজের প্রত্যাশা অকপটে তুলে ধরেছিলেন জাতির পিতা। তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চয়ই সুখী হতাম, যেমন আমি পিজি হসপিটালে গিয়ে দেখি যে এতজন ডাক্তারের নাম, যারা শহীদ হয়েছেন। তাদের নাম লিখে ফলক করে রাখা হয়েছে। আমি সুখী হতাম বারের সদস্য ভাইয়েরা- যে যে সহকর্মীরা, যারা শহীদ হয়েছেন, এই সুপ্রিম কোর্টের গেটে এসে দেখতে পেতাম যে শহীদের নাম সেখানে লেখা রয়েছে, আমি সুখী হতাম।’

দীর্ঘদিনেও বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশা পূরণ না হওয়াকে আইনজীবী নেতাদের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেহেতু বঙ্গবন্ধু একটি নামফলকের প্রত্যাশা করেছিলেন সুতরাং সেটি করা অবশ্যই উচিত ছিল। আমি মনে করি, এটা না করতে পারাটা এক ধরনের ব্যর্থতা। যেহেতু বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশা ছিল, তাই আমিও প্রত্যাশা করছি, এখনও সময় আছে দ্রুত শহীদ আইনজীবীদের তথ্য যাচাই করে তাদের নামফলক স্থাপন করা হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেওয়ার প্রায় ১১ মাস আগে ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি একটি রেজুলেশন পাস করেন তৎকালীন বারের নেতারা। পাস হওয়া রেজুলেশনে একাত্তরে শহীদ ৮ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করা হয়। তবে এরপর আর সে রেজুলেশন আলোর মুখ দেখেনি।

রেজুলেশনে থাকা শহীদ আইনজীবীদের মধ্যে রয়েছেন, যশোরের মশিউর রহমান (পাকিস্তানি আর্মিদের দ্বারা নিহত), দেওয়ান মাহবুব আলী (যুদ্ধরত অবস্থায় নিহত), একেএম সিদ্দিক ওরফে হেনা মিয়া (পাকিস্তানি আর্মি, রাজাকার ও আল-বদর বাহিনী দ্বারা নিহত), আর কে বনিক, আফসারুদ্দিন, এম. মুদাব্বির হোসেন ও হাফেজ এ. মান্নান।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, আমরা সমিতির দায়িত্বে থাকাকালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘ইতিহাসের মহানায়ক’ নামে একটি বই প্রকাশ করি। ওই বই প্রকাশের সময় আমরা সমিতির বেশ কিছু নথি হাতে পাই। যা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কখনও আলোর মুখ দেখেনি। তার মধ্যে সমিতির একটি রেজুলেশনে ৮ জন শহীদ আইনজীবীর তালিকা রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রধান ফটকের সামনে অরক্ষিত অবস্থায় নাম পাওয়া যায় মাত্র দুজন শহীদ আইনজীবীর। তারা হলেন, একেএম সিদ্দিক ও আব্দুল আহাদ। সুপ্রিম কোর্ট বারের রেজুলেশনের সঙ্গে একেএম সিদ্দিকের নামটি মিলে গেলেও উল্লেখ ছিল না শহীদ আইনজীবী আব্দুল আহাদের নাম।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটা অবশ্যই আমাদের ব্যর্থতা। তবে এই ব্যর্থতা ঘোচানোর এখনও সুযোগ রয়েছে। সমিতি ভবন সংস্কারের কাজ চলছে। আমরা খুব শিগগিরই এটা করে ফেলতে পারবো বলে আশা করছি।