ঢাকা নগর পরিবহন: সেবা ভালো, যাত্রী এখনও কম

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি। সেবার মান ভালো হলেও যাত্রী সংকটে ভুগছে পরিবহনটি। অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাচ্ছে না পর্যাপ্ত যাত্রী। ঢাকা নগর পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরিবহনে স্টপেজ কম। তাই অনেক যাত্রী যত্রতত্র নামতে পারছে না। এ কারণেই এমন সংকট।

বাস রুট রেশনালাইজেশনের অংশ হিসেবে গত ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৫০টি বাস নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকা নগর পরিবহন। এতে বিআরটিসির ৩০টি ডাবল ডেকার ও ট্রান্স সিলভা পরিবহনের ২০টি বাস রয়েছে। দুই মাসের মধ্যে মোট ১০০টি বাস যুক্ত হয়ে পুরোদমে এর কার্যক্রম চালু হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ রুটে চলাচলরত রজনীগন্ধা পরিবহন ও সিটি লিংক পরিবহনের যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

যাত্রা শুরুর এক সপ্তাহ পরও অনেক আসন খালি নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে চলছে বাসগুলো। নগর পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা নগর পরিবহনে যাত্রীরা উঠুক, এটা চায় না অন্য বাসগুলো।

অন্যরা যেখান-সেখান থেকেই যাত্রী তুলছে। আবার যাত্রীর চাহিদা মতো যত্রতত্র নামিয়েও দিচ্ছে। যে কারণে সেবার মান ভালো হলেও যাত্রী পাচ্ছে না নগর পরিবহন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ কাউন্টারের ম্যানেজার জানান, আমাদের বাসগুলো নির্ধারিত স্থান ছাড়া যাত্রী ওঠানামা করায় না। অন্য পরিবহনগুলো যত্রতত্র যাত্রী তুলছে ও নামাচ্ছে। এ কারণে তারা যাত্রীও পাচ্ছে বেশি। এই রুটে অন্য পরিবহন বন্ধ না করলে যাত্রী সংকটে থাকবে নগর পরিবহন।

শনির আখড়া থেকে শাহবাগ এসেছেন ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পথে পথে দেখলাম অনেক যাত্রী স্টপেজ ছাড়া নামতে চাচ্ছে। কিন্তু সুযোগ নেই। অন্য পরিবহনগুলোকে দেখলাম যেখানে সেখানে ঠিকই নামাচ্ছে। আমি মনে করি সরকারের এই উদ্যোগ সফল করতে হলে এই রুটে অন্য পরিবহন বন্ধ করতে হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যাত্রীর সংখ্যা কমের বিষয়টি আমরা জানি। কারণ, এই রুটে পরিবহনটি নতুন। মানুষ এখনও ভালোভাবে জানেন না। প্রচারণা বাড়লে যাত্রীও বাড়বে। কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। আগামী সভায় আমরা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করবো।’

জানতে চাইলে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একই করিডোরে অন্য কোম্পানির বাস চলার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ কারণে দুই কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। অন্য কোম্পানির বাস বেশি যাত্রী তুলতে চাইবে। নগর পরিবহন পথ থেকে যাত্রী নিতে পারবে না। সে যখন কম যাত্রী পাবে তখন বিশৃঙ্খলা হবে। এখন সেটাই হচ্ছে।’

২০১৮ সালে ঢাকা শহরে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ডিএসসিসির তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি গঠন করে সরকার। এখন পর্যন্ত এই কমিটি ২০টি সমন্বয় সভা করেছে। ছয়টি কোম্পানির অধীনে ঢাকার ২২টি রুটে সব বাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে পরীক্ষামূলকভাবে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার পথে এটি চালুর পরিকল্পনা নেয় কমিটি।