দুদকের নজরদারিতে থাকা প্রকৌশলীকে চুক্তিতে নিয়োগের সুপারিশ বিমান প্রতিমন্ত্রীর

প্রকৌশলী একেএম মাকসুদুল ইসলাম, গত ৩০ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে থেকে অবসরে গিয়েছেন। ১ জানুয়ারি থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়া এই প্রকৌশলী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের (ফেইজ-১) পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবনসহ সম্প্রসারণ কাজ চলছে।

এই প্রকৌশলীর অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি অবসরে গেলেও তাকে ২ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানের মিটসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসং এর কনসোর্টিয়াম এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের দায়িত্ব পেয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বেবিচকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম মাকসুদুল ইসলাম প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

দুদক সূত্র জানায়, বেবিচকের দুই প্রকৌশলীর অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক একেএম মাকসুদুল ইসলাম। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে মাকসুদুল ইসলাম, তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের পাঠানো নোটিশে স্বনামে-বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, দায়দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী নোটিশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে দুদকে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, দুদকের নোটিশ পাওয়ার পর সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন একেএম মাকসুদুল ইসলাম। তার দেওয়া তথ্য যাচাই বাছাই করে পরে ব্যবস্থা নেবে দুদক।

জানা গেছে, একেএম মাকসুদুল ইসলামের চাকরির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ১ জানুয়ারি থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে গিয়েছেন তিনি। বর্তমানে অতিরিক্তি দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে আছেন বেবিচকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পিএন্ডডি/কিউএস সার্কেল) মো.হাবিবুর রহমান।

দুদকের নজরদারিতে থাকলেও একেএম মাকসুদুল ইসলামকে ৩ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে ২৭ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন সচিবের কাছে চিঠি দেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে মাকসুদুল ইসলামকে অভিজ্ঞ, অতিশয় যোগ্য প্রকৌশলী হিসেবে উল্লেখ করে তাকে ২ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে ৩০ ডিসেম্বর ডিওপত্র লেখেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। যার স্মারক নম্বর ৩০.০০.০০০০.০১৩.১১.০০৭.১৮.৭৮।

চিঠিতে বলা হয়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটি রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প। ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের আওতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্বিতীয় টার্মিনাল ভবন, টানেলসহ বহুতল কার পার্কিং, ফায়ার ফাইটিং স্টেশন, ইমপোর্ট কার্গো টার্মিনাল, এক্সপোর্ট কার্গো টার্মিনাল, বিমানের পার্কিং এপ্রোন, র‌্যাপিড এক্সিড ট্যাক্সিওয়ে, কানেকটিং টেক্সিওয়ে, ল্যান্ড সাইডে এলিভেটেড রোডসহ বিমানবন্দর সংলগ্ন সড়কের সঙ্গে কানেকটিভিটি স্থাপন, যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুয়েপমন্টে,  বৈদ্যুতিক, যোগাযোগ সরঞ্জাম, বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সংস্থাপনসহ বিমানবন্দরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে।

এতে বলা হয়, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে এ সব কার্যক্রম সম্পাদনে মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বেবিচরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম মাকসুদুল ইসলাম অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করছেন। এই প্রকল্পের মতো বড় ও বিশেষায়িত প্রকল্পের কাজে পরিচালক হিসেবে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দক্ষ লোকের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে মাকসুদুল  ইসলাম যোগ্য প্রকৌশলী।

চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রকল্পটি সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগানো  প্রয়োজন। সেজন্য প্রকল্পের চলমান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য তাকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা প্রয়োজন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প (ফেইজ-১) এর প্রকল্প পরিচালক পদে একেএম মাকসুদুল ইসলামকে অবসরো ত্তর ছুটি বাতিলপূর্বক তাকে চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ থেকে ২ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সদয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ কামনা করছি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ৩ মার্চ সচিবালয়ে দুদকের তৎকালীন কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বেবিচক ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর কাছে হস্তান্তর করেছিলেন। সে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বেবিচকে ১১ ও বিমানে ৮ ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে। প্রতিবেদনে দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে ১১টি সুপারিশ পাঠায় দুদক। প্রতিবেদনে বলা হয়, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, ক্রয় খাত, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, নির্মাণ, উন্নয়ন কাজ, পরামর্শক নিয়োগ, কর্মী নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি, বিমানবন্দরের স্পেস, স্টল ও বিলবোর্ড ভাড়াসহ ১১ ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে বেবিচকে।