কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠে পুলিশের তারকাঁটার বেড়া

রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে তারকাঁটার বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করেছে পুলিশ। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে কলাবাগান থানা পুলিশের ১০-১২ জন সদস্যের উপস্থিতিতে মাঠটির চারপাশে তারকাঁটার বেড়া দেওয়া হয়। মাঠ হিসেবে পরিচিত জায়গাটিতে কলাবাগান থানার ভবন হওয়ার কথা। তবে থানা ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী আন্দোলন করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠটির চারদিকে কয়েকটি রেইনট্রি ও মেহগনি গাছ, এক পাশে আবর্জনার ভাগাড়। এছাড়াও মাঠের এক কোণায় লাশ গোসল করানোর ঘর।

জায়গাটি খোলা হওয়ায় সেখানে স্থানীয় শিশুরা সুযোগ পেলেই খেলায় মেতে ওঠে। বড়রাও হাঁটেন, আড্ডা দেন। এটিই ঢাকার কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ নামে পরিচিত।  তবে প্রস্তাবিত কলাবাগানের থানা ভবন হওয়ায় এটি এভাবে ব্যবহারের সুযোগ থাকছে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, এটি সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত কোনও মাঠ নয়। স্থানীয় লোকজন মাঠের মতো করে ব্যবহার করে আসছেন।

গত বছরের ২৪ আগস্ট ঢাকা জেলা প্রশাসনের এক নোটিসে বলা হয়, ডিএমপির কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য এই সম্পত্তি সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ওই নোটিসে এই জমিকে পতিত জমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ওই নোটিসের পর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কলাবাগানের বাসিন্দা, পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন, সমাজকর্মী, উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিককর্মী ও শিশু-কিশোররা এই নোটিসের বিরুদ্ধর আন্দোলন করেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, এ জায়গার প্রকৃত মালিক মুক্তিযুদ্ধের পর আর দেশে ফেরেননি। পতিত জমি হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

এটিকে মাঠের দাবিতে আন্দোলনরত সমাজকর্মী ও কলাবাগানের বাসিন্দা সৈয়দা রত্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের এলাকায় কোনও মাঠ নেই।  শিশু-কিশোররা এখানে খেলতে আসে।  প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই মাঠে খেলাধুলা করেছে। সেখানেই থানা ভবন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এলাকার সবাই এটিকে মাঠ হিসেবেই চায়। আমরা এ দাবিতে আন্দোলন করছি। গণস্বাক্ষর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।  তারপরও এই খোলা জায়গাটিতে থানার ভবন বানানোর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মারুফ হোসেন জানান,  ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এরকম কিছু জায়গা রয়েছে। যেগুলোকে আমরা পকেট স্পেশনবলে থাকি। সেই জায়গাগুলোকে দখল করা হচ্ছে। অথচ এসব জায়গা আমরা শিশু-কিশোরদের মাঠ হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এই জায়গাগুলো সংস্কার করে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া উচিত।

জেলা প্রশাসন বলছে, তারা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। সরকার যেটা বলবে, তারা তাই করবে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এম জামাল হোসেন বলেন, সরকার থেকে এ জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে বলা হয়েছে। প্রশাসন সে অনুযায়ী নোটিস দিয়েছে। এখন যদি আবার বলা হয়, এ জমিতে থানা করা যাবে না, তাহলে প্রশাসন আবার সেভাবে নোটিস দেবে।

কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় এই জমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ দিয়েছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমিটি আজকে আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে কলাবাগান থানার ভবন হওয়ার কথা রয়েছে।