চালের উৎপাদন দ্রুত বাড়াতে রোডম্যাপ হচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী

চালের চাহিদার অনুপাতে দ্রুত উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘দেশে এই আমনের মৌসুমে নবান্নের সময়ও চালের দাম বাড়ছে। এবছর আউশ, বোরো ও আমনে রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। সরকারি মজুতও সর্বকালের সর্বোচ্চ, তারপরও চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় চালের মূল্য নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলে  চালের উৎপাদন  দ্রুত  বাড়াতে হবে। এটি করতে হলে অতি উচ্চ ফলনশীল ইনব্রিড ও সুপার হাইব্রিড জাতের আবাদ বাড়াতে হবে। সেলক্ষ্যে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে, যাতে করে ১-২ বছরের মধ্যে উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি করা যায়।’ 

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ধানের উৎপাদন বাড়াতে অতি উচ্চ ফলনশীল ইনব্রিড ও সুপার হাইব্রিড জাতের আবাদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কৃষি জমি ক্রমশ কমছে। চালের উৎপাদন বাড়াতে গেলে নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ উৎপাদনশীল জাতগুলোকে দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে হবে এবং সুপার হাইব্রিডের চাষ বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া পাহাড়, হাওর, উপকূলসহ প্রতিকূল এলাকায় ধানের চাষ সম্প্রসারণ করতে হবে। সেজন্য আগামী বোরো, আউশ, আমন মৌসুমে ধানের উৎপাদন বাড়াতে  সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। নতুন উদ্ভাবিত অতি উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৮৯ ও ব্রি-৯২ বোরো জাতের ধানের উৎপাদন প্রতি শতাংশে প্রায় ১ মণ।  এটিকে দ্রুত মাঠে নিতে এবার বোরোতে ব্রি ধান ৮৯ ও ৯২ যেসব কৃষক চাষ করবে, তাদের লিস্ট করে উৎপাদিত ধানের সবটুকু বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে বীজ হিসেবে কিনে নেওয়া হবে। যাতে বীজ সংকট না হয়। চাষিদের কাছে জনপ্রিয় করতে বিনামূল্যে বীজ দেওয়া হবে, সারের দাম আরও  কমিয়ে দেওয়া হবে।’

চালের চাহিদার সঠিক পরিসংখ্যানের ওপর গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দেশে চালের চাহিদা, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা নিয়ে পরিসংখ্যানগত অসঙ্গতি দূর করতে হবে।’ তিনি বিবিএস ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে এ বিষয়ে আরও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানের আহ্বান জানান।

চালের দাম বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি দেশে চালের দাম কিছুটা অস্থিতিশীল ও ঊর্ধ্বমুখী। আন্তর্জাতিক বাজারেও খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে গমের দাম টনপ্রতি ২৩০-২৮০ ডলারের মধ্যে ছিল, তা বেড়ে এখন ৪৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে গম আমদানি হয়েছিল ৪৮ লাখ টন, আর এ অর্থবছরে জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে মাত্র ১৬ লাখ টন। দাম বাড়ার কারণে গম আমদানি কম হচ্ছে। ফলে আটা ও ময়দার দাম চালের চেয়ে বেশি, অথচ সবসময়ই আটার দাম চালের চেয়ে কম থাকে। এছাড়া, দেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রতিবছর ২২-২৪ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। প্রাণি-মৎস্যের খাদ্য হিসেবেও চালের কিছু ব্যবহার হচ্ছে। মানুষের আয় এবং জীবনযাত্রার মানও বেড়েছে। এসব মিলে চালের চাহিদা ও কনজামশন দিন দিন বাড়ছে। ফলে চালের দাম কিছুটা বেশি, তবে এই মুহূর্তে দেশে খাদ্যের কোনও সংকট নেই।’  

সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থাপ্রধান ও বেসরকারি সীড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময়  অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা হাইব্রিড বীজের ক্ষেত্রে তাদের মজুত ও সক্ষমতা তুলে ধরেন।