ও চেনাতে ওড়না আছে এখনও

প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে এবারও ‘ওড়না’ রয়ে গেছে। ২০১৭ সালে সমালোচনার মুখে ‘ওড়না চাই’ বাদ গেলেও শূন্যস্থান পূরণের জায়গায় এখনও আছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন—ছয় বছরের শিশুকে ‘ও’ অক্ষর চেনাতে ওড়না শব্দটি রাখার কোনও যুক্তি নেই। জেন্ডার সংবেদনশীল বিষয়ের অবতারণা এবং অলঙ্করণে সাম্প্রদায়িক বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে বই তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি ও ইবতেদায়ির প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ১৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘ও’ অক্ষর চেনাতে শূন্যস্থানে উপকরণ হিসেবে ওড়নার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

২০১৭ শিক্ষাবর্ষেও ‘ও’ চেনাতে কন্যা শিশুর ছবির পাশে ‘ওড়না চাই’ বাক্যটি ব্যবহার করা হয়েছিল। তা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনে ‘প্রথম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ওড়না-বিতর্ক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সমালোচনার মুখে পড়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ড। তখন ‘ওড়না’র পরিবর্তে ‘ওজন’ যোগ করা হয়েছিল। কিন্তু থেকে যায় শূন্যস্থান পূরণের ওড়না।

শিক্ষাবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের বিষয়বস্তু থাকা মোটেও উচিত নয়। বিশেষ করে এই বয়সের শিশুর জন্য। লিঙ্গসমতার বিষয়ে যেখানে শিশুদের সচেতন করা উচিত, সেখানে এই ধরনের বিষয়ের অবতারণা করা হলে শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পন্ন হবে না। শিক্ষাক্রম সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের যেখানে যত ধরনের নেতিবাচক বিষয় রয়েছে সেগুলোও ঠিক করা দরকার।’

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেন্ডার সমতা বিঘ্নিত হওয়ার মতো বিষয় থাকা উচিত নয়। শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িক করাও ঠিক নয়। যখন শিশুদের জন্য বই তৈরি করি, তখন শুধু আকর্ষণীয় করলেই হবে না, সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বেও রাখতে হবে।’

অন্যদিকে, ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস হিসেবে ছেলে শিশুদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে পাজামা, পাঞ্জাবি ও টুপি এবং কন্যা শিশুদের জন্য সালোয়ার কামিজের সঙ্গে হিজাব।প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের কনটেন্ট এক হলেও পোশাক দুই রকম

শিক্ষাবিদরা জানালেন, একই দেশের ছয় বছরের শিশুদের মধ্যে দুই রকম পোশাক শিশুর মনস্তত্ত্বে আঘাত করবে। সকল শিশুর কাছে যা গ্রহণযোগ্য সেটা করা উচিত।

শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় ছয় বছর বয়সী শিশুকেও ভিন্ন ভিন্ন ভাবধারায় গড়ে তোলা হচ্ছে। এভাবে শিশুদের আলাদা করা উচিত নয়।

শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘আশা করছি নতুন কারিকুলামে সব ঢেলে সাজানো হবে। আমরা বার বার বলছি—শিক্ষা ব্যবস্থাকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। পাঠ্যবইয়ের একটি বিষয়ের মধ্যে ধর্ম শেখানো যেতে পারে। কিন্তু বৈষম্যহীন মূল্যবোধে শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে হবে। ধর্ম যার যেটুকু পালন করার তা করবে। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষানীতি অনুযায়ী করতে হবে।’

এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, “২০১৭ সালের আলোচনার পর ‘ওড়না চাই’ বাদ দেওয়া হয়েছে। তারপর কোথাও রয়ে গেছে কিনা জানা নেই। বর্ণমালা শেখাবার জন্য হয়তো রাখা হয়েছে। ‘ও’ দিয়ে খুব কম শব্দ আছে। প্রথম শ্রেণির শিশুদের পরিচিত শব্দের বিষয়টি চিন্তা করা হয়। হয়তো ‘ও’ দিয়ে পরিচিত তেমন শব্দ পাওয়া যায়নি। আগে বড় সমস্যা ছিল ‘ওড়না চাই’। ওড়না এমন কোনও বিষয় নয় যে সবাইকে চাইতে হবে।”

সাধারণ ও ইবতেদায়ি বইয়ের কনটেন্ট এক থাকলেও পোশাক আলাদা কেন প্রশ্নে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘আগে থেকেই চলে আসছে। আগামীতে নতুন কারিকুলামে নেতিবাচক বিষয় থাকবে না।’