‘ঋণ খেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে এডিআর পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে’

ঋণ খেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতিকে সফলভাবে কাজে লাগাতে হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘এর পাশাপাশি মামলার শুনানি পর্যায়ে বিবাদীর অযৌক্তিক কালক্ষেপণ রোধ করতে হবে।’

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অর্থঋণ আদালতে কর্মরত যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজদের জন্য ভার্চুয়ালি আয়োজিত ১৪৪তম রিফ্রেসার কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতের মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা হলে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অনাদায়ী থেকে যায়। উল্টো মামলাগুলোর পেছনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যেমন ব্যয় হয়, তেমনই ব্যবস্থাপনায় সৃষ্টি হয় জটিলতা। বিষয়টি বিবেচনা করেই অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ সংশোধন করে আদালতের বাইরে এডিআর পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু লক্ষণীয় যে, বিভিন্ন কারণে এ পদ্ধতির সফল প্রয়োগ হচ্ছে না।’

তিনি মনে করেন, ঋণ খেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এডিআর পদ্ধতিকে আরও কার্যকরভাবে অনুসরণ করতে হবে। এর পাশাপাশি শুনানি পর্যায়ে বিবাদীর অযৌক্তিক কালক্ষেপণ রোধ, অর্থঋণ আদালত আইনের ৪৬(৫) ধারা মতে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আদালত, সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিয়মিত সমন্বয় সাধন এবং বাদীপক্ষ/ডিক্রিদার পক্ষের সময় মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। এছাড়া ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ মঞ্জুরির বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা ও লোন আদায়ে বাদীপক্ষের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সারাদেশের কোন আদালতে কতটি ঋণ খেলাপি মামলা রয়েছে, কেন তা নিষ্পত্তি হচ্ছে না এবং কী উদ্যোগ নিলে মামলা  দ্রুত নিষ্পত্তি হবে, সে বিষয়ে তথ্য ও মতামত সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে নিশ্চয়ই এ মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়বে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘সব ধরনের মামলাজট কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসাই এখন বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, মানুষ এখন শুধু ন্যায়বিচারই চায় না, তারা দ্রুত ন্যায়বিচার চায়। জনগণের এই চাওয়াটাকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে, মূল্য দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্ব এখন বদলে গেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে আরও বদলে যাবে। উন্নত দেশগুলোতে এখন দ্রুত সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানও এখন উন্নত বিশ্বের  সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত সেবা প্রদান করছে। তাই জনগণকে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকেও এগিয়ে যেতে হবে। তা না-হলে  বিচার বিভাগ পিছিয়ে পড়বে। সে কারণেই  বর্তমান সরকার বাংলাদেশে একটি সুদক্ষ ও বিশ্বমানের বিচার বিভাগ গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।’

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার এবং  ইনস্টিটিউটের পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বক্তৃতা করেন।