‘মানবতা বেঁচে আছে, তোফাজ্জলরা ভালো থাকুক’

‘মানবতা এখনও বেঁচে আছে, এখনও রয়েছে মানবিক মানুষ, হোক না হোটেল কর্মচারী, তাতে কী। তোফাজ্জলের মতো মানবিক মানুষরা ভালো থাকুক, এটাই দোয়া করি’, হারানো আইফোন ফিরে পেয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন আনন্দে আত্মহারা ফৌজিয়া আফরিন। 

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় বসে মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ও তোফাজ্জলসহ সবার সামনে এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি।

উত্তরা এলাকায় ঘুরতে বের হয়ে ফৌজিয়া আফরিন তার আইফোনটি হারিয়ে ফেলেন। ‘মোবাইল ফিরে পাবেন’, পুলিশ সদস্যদের এমন আশ্বাসের কথাও প্রথমে তার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। তারপর যখন মোবাইল হাতে পেলেন, তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান।

মোবাইলের মালিক ফৌজিয়া আফরিন (২৫) বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ব্যবসায়ী স্বামী বিদেশ থেকে এই আইফোনটি তাকে এনে দিয়েছেন। এটি তার খুবই শখের মোবাইল। তিনি বলেন, ‘গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এটি হারিয়ে ফেলার পর খুবই আক্ষেপে ভুগছিলাম। রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইলটি রাস্তায় পড়ে যায়। টের পাওয়ার পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরে গিয়ে খোঁজ করা সম্ভব হয়নি। যখন উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলো এবং জানালো যে, আইফোনটি পাওয়া গেছে। এটা শোনার পর অসম্ভব ভালো লেগেছে।’

ফৌজিয়া আফরিন বলেন, ‘মঙ্গলবার মোবাইল ফিরে পেয়েছি। ঘটনাটি শুনে খুবই অবাক হয়েছি।  লোকটির প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে। এখনও আমাদের মাঝে মানবতা আছে।’

মোবাইল ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে হোটেল কর্মচারী তোফাজ্জল মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ১৪ ফেব্রুয়ারি উত্তরায় রাস্তা পার হওয়ার সময় মোবাইলটি পড়ে থাকতে দেখি। ফোনটি পাওয়ার পর অনেকেই বলেছিল, নিজের কাছে রেখে দিতে, কিংবা বিক্রি করে দিতে। যেহেতু এটি আইফোন অনেকেরই এটার প্রতি লোভ ছিল। কিন্তু আমি সেটি ১৬ ফেব্রুয়ারি উত্তরা পূর্ব থানা যাই। মোবাইলটি মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ স্যারদের বলি। তারাই মালিককে খুঁজে বের করেছেন। মোবাইলটি মালিকের কাছে দিতে পেরে আমারও খুব ভালো লাগছে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের এয়ারপোর্ট জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার তাপস কুমার দাস বাংলা ট্রিবিউন কে বলেন, ‘উত্তরা আব্দুল্লাহপুরের একটি রেস্টুরেন্টের কর্মচারী তোফাজ্জল মিয়া রাস্তায় পড়ে থাকা মোবাইল সেটটি পান। নিজের লোভকে সংবরণ করে তিনি মূল মালিকের কাছে মোবাইলটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে আসেন। তিনি খুবই মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। মোবাইলটি মূল মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে তিনি অত্যন্ত খুশি। সমাজে ছড়িয়ে থাকা ভালো মানুষ তোফাজ্জলরা বেঁচে থাকুক, সবার ভালোবাসায়।