অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় এবারের বইমেলা। এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্ত ।’ এছাড়া এ বছর ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছরপূর্তি এবং একইসঙ্গে সংবিধান প্রণয়নের পঞ্চাশ বছরপূর্তির তাৎপর্যকে ধারণ করে চলছে বইমেলা।
এবারের বইমেলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের পর এসেছে দুইশরও বেশি নতুন বই। মেলার ১২তম দিন শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বই মেলার বিভিন্ন স্টলে ঘুরে এ তথ্য জানা যায়। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, উপন্যাস, কবিতায় পাঠকের আগ্রহের প্রধান জায়গা হলেও এসব বইয়েও বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশেষত এ ধরনের বিষয় সংশ্লিষ্ট ও লেখক, গবেষক ছাড়া সাধারণ পাঠকের এ সম্পর্কিত বইয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।
এ সম্পর্কিত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি ও তাম্রলিপি। যথাক্রমে ৪৭ ও ৪৬টি করে। বাংলা একাডেমির নতুন প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘ছোটোদের বঙ্গমাতা’, সাহেদ মন্তাজের ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বঙ্গবন্ধু’, রঞ্জনা বিশ্বাসের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু ও নারীপুনর্বাসন’, স্বরোচিষ সরকারের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলা ভাষা’, রফিকুর রশীদের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু ও মুজিবনগর’ ইত্যাদি।
তাম্রলিপি প্রকাশনীর বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা’, ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন’, ‘বঙ্গবন্ধুর কলকাতা জীবন’, ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’, ‘বঙ্গবন্ধুর সোহরাওয়ার্দী’ ইত্যাদি।
এসব বই কিনতে মানুষের আগ্রহ কেমন জানতে চাইলে তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী দিপা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা নিয়ে লেখা এসব বই লেখক, গবেষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বেশি কিনছেন। যারা নিচ্ছেন একসঙ্গে অনেক বই নিচ্ছেন। কেউ সংগ্রহ করার জন্য নিচ্ছে। তবে অপেক্ষাকৃত তরুণদের মাঝে এসব বইয়ের চাহিদা কম।’
শব্দ শৈলীর বিক্রয়কর্মী বলেন,‘এসব বইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, লেখক, গবেষক ছাড়া সাধারণ পাঠকের তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে ৪৪টি বই ও আগামী প্রকাশনী ৩৫টি। এসব বই বিক্রি করছেন প্রকাশনীর বিক্রেতা মাসুম। বই বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে মেলার ইনচার্জ ইমতিয়াজ বলেন, ‘প্রতিবছরই আমাদের প্রকাশনী বড় অংশ থাকে বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলনে ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। এসব বইয়ে বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তবে উচ্চ শিক্ষিত, শিক্ষক, গবেষকরাই এসব বই বেশি কিনছেন।’
এ ছাড়া এসেছে অনন্যা থেকে মোহাম্মদ সেলিমের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়’ ও সেলিনা হোসেনের ‘গল্পের ছায়ায় বঙ্গবন্ধু’, বাংলা প্রকাশ থেকে মোজাম্মেল হক নিয়োগীর ‘মহানায়কের ফেরা’, শোভাপ্রকাশ থেকে অরুণ কুমার গোস্বামীর ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ’, পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স থেকে মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাকের ‘ছোটদের বঙ্গবন্ধু’ এবং মেরিট প্রকাশনী থেকে ‘বঙ্গবন্ধুর বাকশাল কর্মসূচি।’
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রথমা প্রকাশনী তিনটি, ইত্যাদি প্রকাশনী ১০টি, ছায়াবীথি প্রকাশনী ৪টি, মহাকাল প্রকাশনী ২টি, কথা প্রকাশ ৯টি, সময় প্রকাশনী ৫টি, অনুপম প্রকাশনী ৪টি, কাকলী প্রকাশনী ২টি, নালন্দা প্রকাশনী ৫টি, শোভা প্রকাশ ৫টি, মাওলা ব্রাদার্স ৩টি প্রকাশ করছে।
ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বই
ভাষা আন্দোলন নিয়েও বেশকিছু বই প্রকাশ হয়েছে। আগামী প্রকাশনী এনেছে ড. এম আব্দুল আলীমের ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন জেলাভিত্তিক ইতিহাস’, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে রফিকুল ইসলাম’ ও ‘ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা’ শীর্ষক তিনটি বই। একই প্রকাশনী থেকে এসেছে হাবিবুল্লাহ ফাহাদের ‘আন্দোলনের ৭০ বছর: দুই ভাষা সংগ্রামীর মুখোমুখি।’
আলোচনা অনুষ্ঠান
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি শীর্ষক আলাচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খালিদ হাসাইন, আহমাদ মোস্তফা কামাল এবং ফারহান ইশরাক। সভাপতিত্ব করেন মফিদুল হক।
নতুন বই
এ দিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৯টি। যার মধ্যে গল্প ১০টি, উপন্যাস ১৫টি, প্রবন্ধ ৭টি, কবিতা ৩৫টি, গবেষণা ২টি, ছড়া ২টি, শিশু সাহিত্য ৭টি, জীবনী ৩টি, মুক্তিযুদ্ধ ৩টি, বিজ্ঞান ৪টি, ভ্রমণ ৬টি, ইতিহাস ১টি, বঙ্গবন্ধু ৪টি, ধর্মীয় ২টি, অভিধান ১টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি এবং অন্যান্য ১৫টি।