সাবেক এমপি পাপুলের সহযোগী মনির গ্রেফতার

মানবপাচার ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে লক্ষ্মীপুরের সাবেক এমপি কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের অন্যতম সহযোগী সাদিকুর রহমান মনিরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। বুধবার (২ মার্চ) রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সিআইডির মালিবাগ সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির।

হুমায়ুন কবির বলেন, ‘গ্রেফতার সাদিকুর রহমান মুনিরের ব্যাংক হিসাবের (অ্যাকাউন্ট) মাধ্যমে রাজধানীর রাজারবাগ রূপালী ব্যাংকের শাখায় ৩৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়। বুধবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মুনিরের হিসাব থেকে আরও ছয় জনের হিসাবে এসব টাকা বিভিন্ন সময় পাঠানো হয়। সাবেক এমপি পাপুলের হিসাবেও মনিরের হিসাব থেকে টাকা পাঠানো হয়। সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব তথ্য স্বীকার করেছেন। মানবপাচার ও প্রতারণার মাধ্যমে এসব টাকা তার হিসাবে জমা হয়। পাপুলের নির্দেশে এসব টাকা তার হিসাবে জমা পড়ে এবং বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে দেওয়া হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘এই হিসাব ছাড়াও আরও ৫৩টি হিসাবের সন্ধান আমরা পেয়েছি। সেগুলোর বিষয়ে আমরা তদন্ত অব্যাহত রেখেছি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলকে আসামি করে সিআইডি মামলাটি দায়ের করে। এই মামলাটি মানবপাচার ও প্রতারণার মাধ্যমে ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছিল।

‘এ মামলার এক নম্বর আসামি সাবেক এমপি কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল দেশের বাইরে কারাগারে রয়েছে‌ন। এ মামলায় মানব পাচারকারী চক্রের যার সহায়তায় তিনি এ টাকাগুলো ট্রান্সফার করেছেন সেই ব্যক্তিকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। পাপুলের কী ধরনের সম্পত্তি কুয়েতে রয়েছে সে বিষয়ে জানতে আমরা সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।’

হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, ‘কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সিআইডির পক্ষ থেকে কথা বলা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। চেষ্টা করছি, মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য। আমাদের কাছে যতগুলো হিসাব সম্পর্কে তথ্য এসেছে সেগুলো ফ্রিজ করা হয়েছে। কিন্তু এর আগেই তারা সেসব হিসাব থেকে টাকা তুলে নিয়েছিল।  ওই হিসাবগুলো থেকে কী ধরনের লেনদেন হয়েছে সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রেফতার মনির যেসব তথ্য দিয়েছেন সেগুলো এবং অন্যান্য তথ্য আমরা পর্যালোচনা করছি।’

কতজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। অনেকেই অনেকের মাধ্যমে টাকা দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে সংখ্যা বলা সম্ভব হচ্ছে না, কতজন ভুক্তভোগী। আমরা অনেক ভুক্তভোগী পেয়েছি। তবে পাপলুর দেশে কী ধরনের সম্পদ রয়েছে এ বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য আমাদের হাতে পৌঁছেনি।’

এ মামলায় গোলাম মোস্তফা নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনিও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন এবং ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। তিনিও পাপুলের সহযোগী হিসেবে কাজ করে এসেছিলেন বলে সিআইডিকে জানান। এই মামলায় ৭ আসামির মধ্যে দুজন গ্রেফতার হয়েছেন। অন্যরা পলাতক রয়েছেন এবং মূল আসামি কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুল কুয়েতের কারাগারে রয়েছেন।