এমপিও জালিয়াতির সুরাহা হলো না আট বছরেও

শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার হাজি অছি আমরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বরখাস্ত সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর সেলিমের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ ও এমপিও জালিয়াতির সুরাহা হয়নি গত আট বছরেও। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও স্থায়ীভাবে এমপিও কর্তন করা সম্ভব হয়নি তার। সর্বশেষ গত নভেম্বরে শুনানির পরও সিদ্ধান্ত নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন করে শুনানির জন্য উভয়পক্ষকে আরও এক দফা ডেকেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। আগামী ২৩ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) আদেশ জারি হয়েছে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) ফৌজিয়া জাফরীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগের শুনানির পর সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়নি।’ এর কারণ জানতে চাইলে ফৌজিয়া বলেন, ‘অস্পষ্টতা থাকলে আবার ডাকা হতেই পারে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর জানায়, শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার হাজি অছি আমরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বরখাস্ত সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর সেলিম ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে দেড় বছরেরও বেশি সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সাময়িক বরখাস্ত হন। ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর চূড়ান্ত বরখাস্ত অনুমোদন করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন কমিটি।

বরখাস্তের পর বিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনও প্রকার যোগাযোগ না থাকলেও ম্যানেজিং কমিটির সই জাল করে ২০১৩ সালের ১৩ জুন প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপত্র তৈরি করেন জাহাঙ্গীর সেলিম। জাল নিয়োগপত্র জমা দিয়ে এমপিওভুক্তও হন। ওই সময় প্রধান শিক্ষককের পদ শূন্য ছিল। সহকারী প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এই সুযোগই কাজে লাগান জাহাঙ্গীর।

বিষয়টি জানাজানি হলে সহকারী প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুম ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ করেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীর সেলিমের এমপিও স্থগিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। একইসঙ্গে ফৌজদারি আইনে মামলার করার নির্দেশও দেওয়া হয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এরপর বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করেন বর্তমান প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুম। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে তার এমপিও স্থায়ীভাবে কর্তনের আবেদনও জানান তিনি।

জানতে চাইলে উম্মে কুলসুম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর আমি ও বরখাস্ত জাহাঙ্গীর সেলিম শুনানিতে সশরীরে উপস্থিত হই। ওইদিন সকল কাগজপত্র জমা দেই। শুনানির দিন আরও এক দফা প্রমাণ হয় তার নিয়োগ ও এমপিও জালিয়াতির বিষয়টি। তারপরও কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে জানতে পারি নতুন করে আবার শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে।’

উম্মে কুলসুম জানান, মামলার পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সেদিনই জাহাঙ্গীর সেলিমকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। মামলাটি বর্তমানে চলমান।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর জানায়, এসব ঘটনার মধ্যেই বিভিন্ন সময় জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক জাহাঙ্গীর সেলিম নিজেই একটার পর একটা মামলা করেন। আদালতে মামলার আংশিক কাগজপত্র দাখিল করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান শিক্ষক পদে এমপিও ছাড়ের সুপারিশও আদায় করেন ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল।

এদিকে, মন্ত্রণালয় এমপিও ছাড়ের সুপারিশ করলেও জালিয়াতির প্রমাণ থাকায় তা না করে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।