‘মধ্যপ্রাচ্যে বেশিরভাগ অভিবাসী কর্মীর মৃত্যুর সঠিক কারণ অজানা থাকে’

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অভিবাসী কর্মীর মৃত্যু গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি মৃত্যুই সৌদি আরবে। মৃত্যুর পরিসংখ্যান আনুষ্ঠানিকভাবে যা পাওয়া যায়, তার থেকে বেশি অজানা থাকে। এছাড়া অভিবাসী কর্মীরদের অর্ধেকেরই বেশি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায় না। অভিবাসী কর্মীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে তা কমিয়ে আনতে দেশে-বিদেশে দুই জায়গায় কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

বুধবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসী কর্মীর মৃত্যু বিষয়ে এক পরামর্শক সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সভা সঞ্চালনা করেন রামরুর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার।

সভায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান প্রবাসে মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আমরা যথাযথ অনুসন্ধান করিনি। এখানে কয়েকটি ইস্যু কাজ করে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন খরচ। যারা বিদেশ যায় তাদের একটা টেনশন থাকে, সেই টাকা তোলার। সারা দিন কাজ করার পর যখন কর্মী ঘুমাতে যায়, তখন তার কাছে নিজেকে একা মনে হয়। পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ মৃত্যু এমনিতেই কমানো যায় পরিবেশ ঠিক করে।’

ওয়ারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম  লাশগুলো ময়নাতদন্তের ব্যাপারে। লাশটা ফেরত পাঠানোর আগে যেন একটা ময়নাতদন্ত করে তারা। ফিরে আসার পরও যে ময়নাতদন্ত করে, সরকার লাশ হস্তান্তর করবে, সেটাও হয় না। যেকোনও মৃত্যুর ব্যাপারে সেটা প্রয়োজন। আমরা বহুদিন থেকে এই দাবি করে আসছি।’

সৌদি আরবে বাংলাদেশ মিশনের সাবেক কর্মকর্তা কাজী আবুল কালাম বলেন, ‘যেসব লাশ দেশে আসে এর বাইরে অনেক মৃত্যু আছে। সেসব পরিসংখ্যানে নেই। কারণ সেগুলো স্থানীয়ভাবে দাফন হয়। সেই সংখ্যাও কম না। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের প্রয়োজন আছে।’

বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু মানেই সেখানে ইনহাউজ কিছু একটা হয়েছে। এই জায়গায় আমরা সবাই মিলে কাজ করতে পারি। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে যখন এমন ঘটনা ঘটে, তখন আমাদের নিয়োগ কর্তাকে জবাবদিহি করতে হবে।  আমরা পারি না, এটা আমাদের সিস্টেমের বড় দুর্বলতা। এক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিলে সেদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করতে হবে। নতুবা সুরক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব না।’

অভিবাসন ও উন্নয়নবিষয়ক সংসদীয় ককাসের মহাসচিব মাহজাবিন খালেদ বলেন, ‘এই যে অভিবাসন সেক্টরের ডার্ক সাইড নিয়ে আমরা কথা বলা শুরু করলাম। এসব নিয়ে কিন্তু আমরা কথা বলি না। খারাপ জিনিস নিয়ে সব সময় কথা বললে আমরা উন্নতি করবো কোনদিক দিয়ে। অভিবাসী কর্মীদের পাঠাতে হবে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে। তাছাড়া খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ নিয়ে যে ইস্যু আছে, এগুলো কিন্তু আমরা আমাদের দিক থেকে ঠিক করতে পারি।’

সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে প্রবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্যের যে সমস্যা, সেক্ষেত্রে বিমা কীভাবে অ্যাপ্লাই হচ্ছে। সেটার কি আদৌ সেখানে কোনও ব্যবস্থা আছে? যদি না থাকে আমাদের এই উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।’

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— সাবেক পররাষ্ট্র সচিব  তৌহিদ হোসেন, শহিদুল হকসহ ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড ও বিএমইটির প্রতিনিধিরা।