এসডিজি’র ধারণা পাচ্ছে তৃণমূল

‘দুর্বল’ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ধারণা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য উপজেলা পরিষদ পরিচালনা প্রকল্প (ইউজেডজিপি) ও ইউনিয়ন পরিষদ শাসন প্রকল্প (ইউপিজিপি) গ্রহণ করে সরকার। ২০১৭ সালে শেষ হওয়ার পর প্রকল্প দু’টির অসমাপ্ত কার্যক্রম ও সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পৃথক প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। ইউএনডিপি, সুইজারল্যান্ড ও ডেনমার্ক দূতাবাসের সহযোগিতায় ‘কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার (ইএএলজি)’ নামে প্রকল্পটির মাধ্যমে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো—স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় সেবার মানোন্নয়ন এবং এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করা। এছাড়া সেবার মান উন্নয়নের লক্ষে উপজেলা পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অংশগ্রহণমূলক স্থানীয় উন্নয়নকে গতিশীল করতে—ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে কার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নীতি প্রণয়ন ও সংস্কারে স্থানীয় সরকার বিভাগকে সহায়তা করা। প্রকল্পের আওতায় এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এরই মধ্যে ফরিদপুর, চাঁদপুর, রাজশাহী, খুলনা, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ, রংপুর, নেত্রকোনা ও কক্সবাজার জেলার ১৮টি উপজেলা এবং ২৫১টি ইউনিয়ন পরিষদে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় কার্যকর পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন এবং স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন; জনসাধারণের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় ও গণশুনানি আয়োজনের জন্য ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদকে সহায়তা প্রদান; সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষে উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামকে কার্যকর করা। এছাড়া জেন্ডার সমতা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করাই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

ইএলজিএ (3)

পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদকে বাজেট ও বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সহযোগিতা প্রদান, পরিষদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুব সমাজ এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে সহায়তা ও  উপজেলা পরিষদের তহবিল গঠনে যৌথ অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করা; ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে ওয়ার্ড সভা ও উন্মুক্ত বাজেট সভা আয়োজনে সহায়তা করা; পরিষদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সফটওয়্যার তৈরি করা। এছাড়া ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সংস্কার কার্যক্রম ও বিভিন্ন নীতি-গবেষণা কাজে স্থানীয় সরকার বিভাগকে সহযোগিতা করা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি দরিদ্র জনসাধারণকে আরও কার্যকর সেবা প্রদান করতে পারবে। এছাড়া নাগরিকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি বৃদ্ধি পাবে। পরিষদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি পরিষদের পরিকল্পনা ও বাজেটে এসডিজির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে নির্বাচিত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে পরিকল্পিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে কার্যকর এবং জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার একটি মডেল তৈরি করা হবে। যা সারা দেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রকল্পটির সহায়তায় বিভিন্ন সংস্কার ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যাশিত সেবাপ্রাপ্তি সহজ হবে। সেই সঙ্গে, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সেবা প্রদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে। যা সার্বিকভাবে পরিষদের জবাবদিহি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি পরিষদের আর্থিক ও বাজেট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উন্নতি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

ইএএলজি

জানতে চাইলে গোরগড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বাংলা ট্রবিউনকে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সরকার কাজ করছে। কিন্তু অনেক ইউনিয়ন পরিষদ জানতোই না আসলে এসডিজি কী? ইএএলজি প্রকল্পের আওতায় আমরা এর অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এখন উন্মুক্ত বাজেট সভার মাধ্যমে নিয়মিত বাজেট প্রণয়ন করা হয়। নাগরিকদের অভিযোগ শুনতে গণশুনানি করা হচ্ছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে সরকারের পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এভাবে যদি সব ইউনিয়ন বা উপজেলা পরিষদে কাজ হয় তাহলে এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। যে কারণে তৃণমূলে সেবার মান অনেক বেড়েছে। জনপ্রতিনিধিরাও জনগণের কাছে জবাবদিহির আওতায় আসছে। স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিকদের মতামত প্রাধান্য পাচ্ছে। এসডিজির পুরো ধারণা কীভাবে দেশের তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া যায় সে জন্য কাজ করছে সরকার।