পদায়ন হলেও একবছর ধরে কর্মহীন সেই ৩৮ পুলিশ সুপার

পদোন্নতি পাওয়ার পর প্রায় একবছর অতিক্রান্ত হতে চলছে। এর মধ্যে প্রায় সাত মাস পদায়নহীন ছিলেন ৩৮ পুলিশ সুপার। এই সময়টাতে আটকে ছিল তাদের বেতন-ভাতাও। সাত মাসের মাথায় পদায়ন হিসেবে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে তাদের। কিন্তু এখনও কর্মহীন হয়ে আছেন তারা। নেই কোনও নিজস্ব ডেস্ক। দীর্ঘ সময় ধরে পদায়ন না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন সেই ৩৮ পুলিশ সুপারের অনেকেই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরের সূত্র বলছে, শিগগিরই নতুন সৃজন হওয়া ৬৮টি অতিরিক্ত ডিআইজি পদসহ শতাধিক অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি হবে। অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি হলেই পদায়ন না হওয়া পুলিশ সুপারদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদায়ন করা হবে।

গত বছরের ১৬ মে বিসিএস পুলিশ ২৭ ব্যাচের ৬৩ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পুলিশ সুপার (এসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৮ জনকে একযোগে র‌্যাবে পোস্টিং দেওয়া হয়। একসঙ্গে ৪৮ জন পুলিশ সুপারকে র‌্যাবে পদায়ন করা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। র‌্যাবে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার মাত্র ৯ পদ খালি থাকায় বাকি ৩৯ জন পুরোপুরি অফিস ও কর্মহীন হয়ে পড়েন। এর মধ্যে মোবাইলে নেতিবাচক মন্তব্য করার অভিযোগে একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকি ৩৮ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সাত মাস পর পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত হিসেবে পদায়ন করা হলেও তারা এখনও কার্যালয় ও কর্মহীন হয়ে আছেন।

পুলিশ সদর দফতরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি- মিডিয়া) হায়দার আলী খান বলেন, ‘অন্যান্য ক্যাডারে যেমন পদ ফাঁকা না থাকলেও সুপার নিউমারারি হিসেবে পদায়ন করা হয়। পুলিশে পদ ফাঁকা না থাকলে পদায়নের সুযোগ নেই। এটা শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, পদোন্নতি পাওয়ার পর পদায়ন না হওয়ায় এই ৩৮ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তার বেতন-ভাতা তোলা নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। কোথাও পদায়ন না হওয়ায় দীর্ঘ সাত মাস বেতন আটকে ছিল তাদের। চলতি বছরের শুরু থেকে তাদের বেতন জটিলতা কাটলেও এখনও পদায়ন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পুলিশ সুপার পদে কোথাও পদ খালি না থাকায় তাদের পদায়ন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে,  পুলিশে নতুন করে ১৮টি উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও ৬৮টি অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রথমে অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। তারপর পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এতে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার যেসব পদ ফাঁকা হবে, সেসব পদে এই ৩৮ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদায়ন করা হবে। কিন্তু অতিরিক্ত ডিআইজি থেকে ডিআইজি পদে পদোন্নাতি দেওয়ার জন্য যে এসএসবি বা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সভা হয়, সেটি এখনও হয়নি। একারণে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার অনেক কর্মকর্তাই মনে করছেন, তাদের পদায়ন হতে আরও কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।

এদিকে দীর্ঘ প্রায় একবছর ধরে পুলিশের এই ৩৮ কর্মকর্তা অনেকটা কর্মহীন অবস্থায় থাকায় হতাশায় ভুগছেন। পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত থাকলেও কোনও গাড়ি নেই। কার্যালয়ে বসার জন্য নিজস্ব কোনও চেয়ার নেই। ফলে সুনির্দিষ্ট কোনও কাজও নেই তাদের। তবে সম্প্রতি পুলিশের কনস্টেবল ও সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের সময় এই কর্মকর্তাদের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে নিয়োগ সহায়তার কাজে লাগানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে ৩৮ জন কর্মকর্তা দীর্ঘ দিন ধরে কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন, তাদের অনেকেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে থাকা অবস্থায় জঙ্গিবাদ প্রতিরোধসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে তাদের দক্ষতা বা সক্ষমতাকে রাষ্ট্রের কোনও কাজে লাগোনো যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, একটা নজিরবিহীন ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা দিনাতিপাত করছেন। পুলিশ সুপার হিসেবে তাদের যা পাওয়ার কথা বা করার কথা, তার কিছুই তারা করতে পারছেন না। এমনকি সরকারি গাড়ি বা ডেস্কহীন অবস্থায় চাকরি করছেন তারা। বিষয়টি সবাইকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলছে।

পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা জানান, তারা যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, পদায়ন হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে তাদের সময় লাগবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের প্রতিনিয়ত আশ্বাস দিচ্ছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বিষয়টি এখন হতাশার পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে।

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘এটা একটা চরম সমন্বয়হীনতার উদাহরণ। প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলা যেতে পারে। যদি কোনও শূন্য পদই না থাকে, তবে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হলো কেন? আর র‌্যাবের পোস্টিং হওয়ার পর আবার ফেরত আনা হলো কেন? র‌্যাবে তো পুলিশ সুপারের পদগুলো ফাঁকা থাকার কথা ছিল।’

সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা এই অস্বাভাবিক ঘটনার শিকার হয়েছেন, পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এই কর্মকর্তারা স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হবেন। অতিদ্রুত বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে এই কর্মকর্তাদের পদায়ন করা উচিত।’