রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: ক্ষতিপূরণ মামলার শুনানি চলতি বছরেই

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বহুল আলোচিত সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সেসব রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর থেকে রুল শুনানিতেই আটকে আছে ক্ষতিপূরণ মামলার ভবিষ্যৎ। তবে চলতি বছরেই মামলার রুল শুনানির চূড়ান্ত উদ্যোগের কথা জানালেন মামলাসংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

মামলার বিবরণী থেকে দেখা গেছে, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১ হাজার ১৩৬ জন নিহত এবং আহত হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। মালিকের জোরাজুরির কারণে প্রাণ হারানো এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে এগিয়ে আসে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের তারতম্য ঠিক করতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টসহ (ব্লাস্ট) বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে মোট চারটি রিট দায়ের করেন।

প্রাথমিকভাবে সেসব রিটের একত্রে শুনানিও হয়। শুনানি নিয়ে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি আবদুর রবের সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ক্ষতিপূরণের বিষয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির মাত্রা এবং ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণ করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের সে স্বতঃপ্রণোদিত রুল এবং অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের ফলে সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসিকে প্রধান করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটির অধীনে আরও দুটি উপকমিটি করা হয়। ওই কমিটি রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিহত, নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার এবং স্থায়ীভাবে পঙ্গু হওয়া শ্রমিকদের জন্য ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে।

পাশাপাশি ওই ঘটনায় আহত শ্রমিকদের প্রত্যেককে দেড় লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করেন। এরপর বহু বছর অতিবাহিত হতে চললেও আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পাওয়া সম্ভব হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গের। 

এরই মধ্যে ক্ষতিপূরণের মামলাটি শুনানি করতে বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়। পাল্টে যায় সংশ্লিষ্ট আদালতের রুল শুনানির এখতিয়ার। ফলে আটকে যায় রুলের চূড়ান্ত শুনানি। তবে দীর্ঘ পথচলায় মামলার শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ পুনর্গঠন করেন। তবে এরপরও আদালতের কার্যতালিকায় (কজ লিস্ট) না আসায় এবং আইনজীবীদের উদ্যোগের অভাবে মামলাটির শুনানি থেমে থাকে বছরের পর বছর।

মামলার রুল শুনানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় রিটকারীদের অন্যতম আইনজীবী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্নার। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ বছর ধরে এই মামলার শুনানি করতে পারছি না। শুনানির জন্য উপযুক্ত বেঞ্চ খুঁজছি। যার জন্য অপেক্ষাও বাড়ছে। এই অপেক্ষার আর শেষ হয়নি। কখনও আমরা, আবার কখনও রাষ্ট্রপক্ষ অপেক্ষা করে। তবে আর যাই হোক চলতি বছরেই মামলাটার সুরাহা (চূড়ান্ত রুল শুনানি) করবো।

একই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি মামলার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’