‘অভিযোগ ছাড়া মা-ছেলেকে ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখা সংবিধানের লঙ্ঘন’

রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠে থানাভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে তুলে নিয়ে থানায় আটকে রাখার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘কোনও আইনসিদ্ধ অভিযোগ ছাড়া এভাবে ১৩ ঘণ্টার বেশি আটকে কাউকে রাখা দেশের সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন।’ এ ঘটনার তীব্র নিন্দাও জানান তারা।

আজ সোমবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে তেতুলতলা মাঠে থানা নির্মাণ ইস্যুতে ‘এলাকাবাসীকে হয়রানি ও আটকের তীব্র প্রতিবাদে’ ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হলো- এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রীন, আমরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সোসাইটিসহ অন্যান্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, ‘গতকাল দিনভর প্রতিবাদের মুখে মাঝরাতে থানা কর্তৃপক্ষ সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে ছেড়ে দিলেও মাঠ রক্ষায় তিনি আর আন্দোলন করবেন না বলে বেআইনিভাবে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সৈয়দা রত্না ও তার নাবালক পুত্রকে কোনোরকম আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, কোনও আইনসিদ্ধ অভিযোগ ছাড়াই দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টার বেশি আটক রাখা দেশের সংবিধান এবং আইনের ন্যাক্কারজনক লঙ্ঘন ও বেআইনি। তাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে গতকাল সারাদিন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কেন যোগাযোগ করা যায়নি, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

এর আগে এই মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় এবং নির্মাণকাজের ভিডিও ধারণ করায় গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্নাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁর ছেলেকেও ধরে নেওয়া হয়। দুজনকে রাখা হয় কলাবাগান থানায়।

কলাবাগান থানা পুলিশের এ কাজকে ‘নাগরিকদের জন্য বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক চর্চার অধিকার এবং মানবাধিকারের বিরুদ্ধে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমন অবৈধ আটক ও মুচলেকা গ্রহণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা কেউই নিরাপদ বোধ করি না। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে...পকেটের মধ্যে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেওয়া, যখন-তখন তুলে নিয়ে যাওয়া। এসব কাজ যে চালু আছে- এই ঘটনাকে তার একটা উদাহরণ হিসেবে ধরে আমরা আবার সোচ্চার হলাম।’

তিনি আরও বলেন, 'এদেশে দুই জন নাগরিককে আটকে রাখা যায়, কিন্তু এদেশে ক্ষমা চাইবার কালচার হবে না। তারা কি বলবে না এই ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত-লজ্জিত; আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। যদি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় শত্রু লিগ্যাল গ্রাউন্ড আমাদের জন্য। কোনও অভিযোগ ছাড়া সম্পূর্ণ বেআইনি মুচলেকা নিয়ে ছাড়া হয়েছে। এরকম মুচলেকা নিয়ে ছাড়ার আইনি কোনও সুযোগ নেই। এটা শুধু ইচ্ছাকৃতই না, পরিকল্পিত। এটা করা হয়েছে শুধুমাত্র এলাকার অন্যদের ভয় দেখানোর জন্য।’

সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনসহ আরও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।